সেই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

কপালে টিপ পরায় শিক্ষক লতা সমাদ্দারকে হেনস্তার ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সমাবেশ। আজ রোববার ঢাকার শাহবাগে
ছবি: প্রথম আলো

কপালে টিপ পরায় রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক লতা সমাদ্দারকে হেনস্তা করা সেই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেওয়া হয়েছে শাহবাগের এক সমাবেশ থেকে। ওই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার না করা হলে দুর্বার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ওই পুলিশ সদস্যকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে আজ রোববার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ হয়। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে সাবেক-বর্তমান ছাত্রনেতা এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।

সমাবেশে অংশ নিয়ে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ বলেন, ‘লতা সমাদ্দারকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ। পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিনে এমন একটি বেদনাদায়ক বিষয় নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানোর বিষয়টি আরও বেদনার। ৩৬ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও নিপীড়নের ঘটনা ঘটানো ব্যক্তিটি এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন, হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করার ধারাবাহিকতার ফসল এই ঘটনা।’ তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য তাঁর শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাই অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’

সেই পুলিশ সদস্যের শাস্তি দাবি করেন জাসদের কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক কাজী সালমা সুলতানা। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ সমানভাবে হাঁটলে সমাজ অগ্রগামী হয়। দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালনের ধারাবাহিকতা এখনো রয়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগোলেও মানসিকভাবে অনেক পেছনের দিকে গেছে।

নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের সংগঠক ও আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত বলেন, একজন পুলিশ সদস্য টিপ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর ওই সদস্য একজন শিক্ষককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। ওই শিক্ষকের অপরাধ, তিনি কপালে টিপ পরেছিলেন। সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের যে অভিযোগটি এসেছে, সেটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের দায়।

জীবনানন্দ জয়ন্ত বলেন, ‘এটিকে আমরা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই না। এটি এমন একটি কাজ, যা রাষ্ট্রের চরিত্র সবার সামনে প্রকাশ করে দেয়। এই রাষ্ট্র দিন দিন মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে সরে এসে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি না দেওয়া হলে নারীর প্রতি নিপীড়ন ও যৌন হয়রানির প্রতিবাদে আমরা আরেকটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করব।’

আরেক সংগঠক এবং শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান বলেন, ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্ধকারে ডুবেছে। বর্তমান সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের সরকার বলা হলেও এই সরকারের সময়ে সর্বত্র সংস্কৃতির মানুষদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনলে প্রগতিশীল নারীসমাজসহ আমরা সবাইকে নিয়ে দুর্বার গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে যাব।’

নারীপক্ষের সংগঠক মনীষা মজুমদার বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য অপরাধ করেছেন। এই অপরাধীকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। সরকার বা প্রশাসন কী করবে, জানি না। কিন্তু এই নিকৃষ্ট ঘটনার প্রতিবাদ চলবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ তালেবানি আদলে চলবে না।’

যুবনেতা খান আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে অন্যদের মধ্যে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের সংগঠক মাহফুজা হক ও আকরামুল হক, সাবেক ছাত্রনেতা বিকাশ সাহা ও ফেরদৌস আহমেদ, গণসংগীতশিল্পী শতাব্দী ভব, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বক্তব্য দেন।