সুর চৌধুরী ও শাহ আলমকে তলব করেছে দুদক
অর্থ লোপাটের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আগামী মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে এই দুজনকে। বৃহস্পতিবার দুজনের বাসার ঠিকানায় ওই নোটিশ পাঠানো হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস লিজিং থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ওই দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্সসহ গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এ–সংক্রান্ত অনুসন্ধান দল এরই মধ্যে অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে। তাতে দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে ঢালাওভাবে অর্থ আত্মসাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ওই দুই কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক সূত্র জানায়, কোনো রকম জামানত ছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিধিবিধান লঙ্ঘন করে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্সের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে পি কে হালদার চক্র। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক ও এফএএস ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়ারসহ ১২ কর্মকর্তা ও ঋণ গ্রাহককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি রাশেদুল হক গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎস ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। পি কে হালদার বিভিন্ন সময় আর্থিক সুবিধা ও মূল্যবান উপঢৌকন দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ওই দুই কর্মকর্তাকে বশে রেখে দুর্নীতির মাধ্যমে অবাধে অর্থ লোপাট করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, পি কে হালদারের দুর্নীতির সময়কালে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন শাহ আলম। এ যোগসূত্র থেকে পি কে হালদার ও শাহ আলমের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাশেদুল হকের জবানবন্দিতে শাহ আলমের নাম এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু তাঁকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে সরিয়ে অন্য বিভাগের দায়িত্ব দেয়। ওই সময় এস কে সুর ও শাহ আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির রেকর্ডভিত্তিক কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকায় দুদক তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান দুই কর্মকর্তার দুর্নীতি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।
দুদকের উপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ওই তলবি নোটিশ পাঠিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে এবং এফএএস লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় হয়েছে ১৩টি মামলা। পি কে হালদার ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।