সুপার শেফের ডায়েরি থেকে
রান্না একটি শিল্প। এটা সবাই জানলেও শিল্পটিকে সবাই ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। স্বাদের ব্যাপার তো আছেই। বাংলার রান্নার ইতিহাস বেশ পুরোনো। মোগল আমল থেকে শুরু করে বর্তমান যুগে রান্নার ধরন, স্বাদ ও পরিবেশনা—সবকিছুর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমরা নিত্য নতুন খাবার সম্পর্কে জানতে পারি। তবে ছবি দেখে তো আর খাবারের স্বাদ নেওয়া যায় না। অন্যদিকে, রান্নায় কে কতটুকু পারদর্শী, সেটা নিজে নিজে বিচার করা সম্ভব না। সে জন্য রূপচাঁদা সুপার শেফের মাধ্যমে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারাটা অনেক সৌভাগ্যের। অডিশন রাউন্ড থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্বেই নিজের রান্নার কৌশল মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। সবার কাছ থেকে ধারণা নিয়েছি রান্নার স্বাদ ও পরিবেশনা কীভাবে আরও উন্নত করা যায়।
যেহেতু রূপচাঁদা সুপার শেফ সারা দেশ থেকে নির্ভুল বিচার-বিশ্লেষণ করে তুলে এনেছে সেরা ২০ প্রতিযোগীকে, তাই অঞ্চলভেদে রান্নার রেসিপি ও কৌশল ভিন্ন। সুপার শেফে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন এবং অপ্রত্যাশিত ছিল আমার জন্য। আমার একটা ধারণা ছিল, সুপার শেফ বা কুকিং রিয়েলিটি শোতে হোম শেফরা অংশগ্রহণ করেন, তবে গ্রুমিং সেশনে এসে জানতে পারলাম হোম শেফ ছাড়াও অনেক প্রফেশনাল শেফও অংশগ্রহণ করেছেন। ব্যাপারটা আমাকে একটু নার্ভাস করে দেয়। একই প্লাটফর্মে এত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব তো?
যা-ই হোক সব ভয়কে দূর করে নিজের প্রতি আস্থা রেখে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছি। সত্যি বলতে গেলে, আমার খুব ইচ্ছে ছিল এ রকম একটা প্লাটফর্মে অডিশন উপভোগ করার। নির্বাচিত হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও আমি অডিশন দিলাম। অডিশন দিয়ে ফলাফল না জেনে চলে আসি বাসায়, শো তখনো চলছিল। হঠাৎ আমার কাছে একটা কল এল ওই দিন বিকেলে। ওপার থেকে বলল, ‘মিসেস ফাহমিদা আপনি অ্যাপ্রোন পেয়েছেন। আপনি সেরা দশে আছেন। আপনি কোথায়? এখনই চলে আসেন।’ আমি তখনই বাসা থেকে ইভেন্ট এর উদ্দেশে আবার রওনা হলাম। যদিও আমি ওইখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ইভেন্ট শেষ হয়ে যায়, সব বিচারক এবং দর্শক চলে যান, তবে ইভেন্টের পুরো দল আমার অপেক্ষায় ছিল।
সুপার শেফ কিচেনে প্রথম দিন, নিজের প্রতি আস্থা ও মনোবল নিয়ে শুরু করলাম সুপার শেফের জার্নি। সুপার শেফের জাজ ছিলেন তারিক আনাম স্যার, শেফ ট্রেইনার নাফিজ ইসলাম লিপি এবং উপমহাদেশের সেলিব্রিটি শেফ রঙ্গন নিয়োগী, বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন কলকাতাভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘সানন্দা’র সাবেক সম্পাদক শর্মিলা বসুঠাকুর। প্রথম পর্বে আমরা সম্মুখীন হয়েছি পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবিরের রেসিপি চ্যালেঞ্জে। প্রথম রাউন্ডে কোনো এলিমিনেশন ছিল না। বেঁচে গেছি এই রাউন্ড।
দ্বিতীয় দিন, এই রাউন্ডে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল ফিউশনের ওপর। এই রাউন্ডে ২০ জনের মধ্যে একজন বাদ পড়ে যান। বাকি ১৯ জন পরের রাউন্ডে এগিয়ে যান।
তৃতীয় দিন, এই এপিসোডে সেলিব্রিটি শেফ রঙ্গন নিয়োগী স্যার আমাদের টাস্ক ডেমনস্ট্রেশন দেখান। আমরা সবাই চিকেন রোলেড বানিয়ে পরিবেশন করি জাজদের কাছে। এই রাউন্ডে দুজন বাদ পড়ে যান। একদিনে দুজন একসঙ্গে বাদ পড়ার পর বুঝতে পারি যে আস্তে আস্তে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিছুটা ভয় হচ্ছিল।
চতুর্থ দিন, এই রাউন্ডে নাফিজ ইসলাম লিপি ম্যাম আমাদের একটা টাস্ক ডেমনস্ট্রেশন করে দেখান। ডেমনস্ট্রেশনটা হয় ব্লাঞ্চিং মেথডের ওপর। আমরা এই কনসেপ্টের ওপর একটা মেইন ডিশ তৈরি করি। এই রাউন্ডেও পরপর দুজন বাদ পড়েন। প্রতিযোগিতা আরও কঠিন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, এটাই ভাবছিলাম তখন।
বাসায় যখন রান্না করি তখন তো কেউ বলে না আর মাত্র ২ মিনিট বাকি, ৫ মিনিট বাকি। সুতরাং এখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রান্না শেষ করে কুকিং স্টেশন পরিষ্কার করে বিচারকদের সামনে খাবার পরিবেশন করাটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল প্রতিযোগীদের জন্য। শুরুর পর্ব থেকে এই পর্যন্ত আমিসহ ২০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫ জন বাদ পড়েছেন। এখন আমরা ১৫ জন আছি পরের রাউন্ড ফেস করার জন্য। ভয়ে আছি! আর সামনের দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পরিশেষে একটা ব্যাপার তুলে না ধরলেই নয়। এত দিন বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড মানেই ভেবেছি রূপচাঁদা। আর রূপচাঁদা মানেই চাল আর তেল। তবে এই প্রোগ্রামে এসে বুঝতে পেরেছি রূপচাঁদা শুধু পণ্য হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়, বরং কুকিংয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অনেক পরিবারে অবদানকারী একটি ব্র্যান্ড এটি। শুধু নিজের জীবনের পরিবর্তন থেকে আশ্বস্ত হয়ে বলছি না, বরং বিগত বছরগুলোর বাকি সুপার শেফদের সামাজিক অবস্থান এবং সফলতা আমার বিশ্বাসকে পাকাপোক্ত করেছে। আর তাই রূপচাঁদা সুপার শেফের সব কলাকুশলীকে ধন্যবাদ আমাকে এই অনুষ্ঠানে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এই পরিবেশে মিশে আমার নিজের প্রতি অনেক আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। আমি গর্বিত রূপচাঁদা সুপার শেফের পরিবারের সদস্য হতে পেরে।
সর্বোপরি আমার কাছে, ‘Cooking is based on Chemistry but also involves fantasy and creativity’