সুন্দরবন ধ্বংস হলে দায় সরকারের
সুন্দরবনের রামপাল প্রকল্প নিয়ে পরিবেশবাদীদের তোলা অভিযোগ সঠিক নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি–বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ উন্মুক্ত বিতর্কের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বিতর্কের আয়োজন করতে আহ্বান জানানো হলেও তিনি বা সরকারের কেউ তাতে সাড়া দিচ্ছেন না। প্রকল্পের কাজ যেভাবে সরকার এগিয়ে নিচ্ছে, তাতে সুন্দরবন নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হবে। তখন এর দায় বর্তমান সরকারের ঘাড়ে চাপবে।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতারা। তাঁরা বলেন, বিশ্বের খ্যাতিমান বিজ্ঞানীদের দিয়ে রামপাল প্রকল্পের ওপরে ১৩টি গবেষণা করে আবুল কালাম আজাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই নীরবতা ওই গবেষণা প্রতিবেদনগুলোর সত্যতা স্বীকার করে নেওয়ার সমতুল্য। এ সময় রামপালসহ সুন্দরবনের চারপাশের ৩২০টি শিল্পকারখানা বাতিলের দাবি জানান নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, ‘ইউনেসকোর সিদ্ধান্তকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ইউনেসকো রামপাল তো দূরে থাক, সুন্দরবনের চারপাশে কোনো ধরনের শিল্পকারখানা না করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে কারখানা করার অনুমতি দিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, ‘আমরা সরকারবিরোধী নই। আমরা সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে চাচ্ছি। রামপাল প্রকল্পের কাজ যেভাবে সরকার এগিয়ে নিচ্ছে, তাতে সুন্দরবন নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হবে। তখন হয়তো এই সরকার থাকবে না, কিন্তু জনগণ থাকবে। তখন মানুষ সুন্দরবন ধ্বংসের জন্য এই সরকারকে দায়ী করবে। এই ধ্বংসের দায় বর্তমান সরকারের ঘাড়ে চাপবে।’
প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরিবেশবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল নেটওয়ার্কের (বেন) সমন্বয়কারী অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের পাশে ও পশুর নদের তীরে রামপালসহ ৩২০টি প্রকল্প ও কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। আশির দশকে এভাবে অনিয়ন্ত্রিত শিল্পকারখানা করে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে পশুর নদের পানিরও একই অবস্থা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রামপাল বাদে দেশে অনেক জায়গা আছে। কিন্তু সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। রামপাল প্রকল্পের প্রভাব ছয় মাসের মাথায় দৃশ্যমান হবে। তখন আর করার কিছু থাকবে না।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য শরীফ জামিল বলেন, রামপাল প্রকল্পে ভারতের কোম্পানি মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু তারা ৫০ শতাংশের মালিক হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন পাঁচটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। এসবের মধ্যে রয়েছে রামপাল প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করা, জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া ১৩টি গবেষণা প্রতিবেদন ও ইউনেসকোর সুপারিশ মেনে বন রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া প্রভৃতি।