সীমান্ত হত্যা বন্ধে আবার প্রতিশ্রুতি পেল বাংলাদেশ
বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে হত্যার হার শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি আবার পেল বাংলাদেশ।
বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের চার দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আজ শনিবার এ কথা জানান ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা।
গত বুধবার থেকে শুরু বৈঠকের আলোচ্যসূচির এক নম্বরে ছিল ‘সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি/হত্যা/আহত করা’।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা’ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। সে কারণে হত্যার ঘটনা ঘটছে।
এই ব্যর্থতা বিজিবির কি না, তা জানতে চাইলে সাফিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত চার হাজার কিলোমিটারের বেশি। নদীনালা, পাহাড়–পর্বত আছে। তারপরও এখন পাঁচ কিলোমিটার পরপর সীমান্তচৌকি আছে।
বিএসএফের মহাপরিচালক বলেন, হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। এ জন্য বিজিবি–বিএসএফ সীমান্তে যৌথ টহল দেবে এবং এলাকার লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করবে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারত ১৪ দফা সিদ্ধান্ত নিলেও সংবাদ সম্মেলনজুড়ে বারবারই সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ আসে।
২০০০ সালের পর থেকে হত্যাকাণ্ডের ঊর্ধ্বগতি কেন, বিএসএফ বরাবর বলে আসছে তারা আক্রান্ত হলেই কেবল গুলি ছোড়ে, তাহলে গুলি কেন দেহের ওপরের অংশে, ঠাকুরগাঁওয়ে সম্প্রতি সকাল ১০টায় মাছ ধরার সময় গুলি করে বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে, এই ঘটনা কেন ঘটল—এ প্রশ্নগুলো তোলেন সাংবাদিকেরা।
একপর্যায়ে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যার বাইরের ইস্যুতে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিজিবি সূত্র, বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও অধিকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সীমান্তে ৩৫ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
বিএসএফের মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে যৌথ টহল বন্ধ থাকায় অপরাধ কিছুটা বেড়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বলা হয়েছে নন–লেথাল উইপনস (মৃত্যু ঘটায় না এমন অস্ত্র) ব্যবহার করতে, পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালেই তাদের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিএসএফের ওপর দল বেঁধে হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাতেই তদন্ত করা হয়েছে। শুধু যে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, তাই নয়, ভারতীয় নাগরিকেরাও ওই সব ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
বারবার একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাকেশ আস্থানা বলেছেন, তিনি বিএসএফে নতুন যোগ দিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিএসএফের মহাপরিচালক ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে মাদক বাংলাদেশে ঢোকার কথা স্বীকার করেছেন। মাদক নিয়ন্ত্রণে তাঁরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন।
মাদকসহ যেকোনো পাচারের ইস্যুতে দুই পক্ষ নিয়মিত তথ্য বিনিময়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে। সম্মেলনে মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালকবৃন্দ ও বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসার ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
সম্মেলনে বিএসএফের মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।
এবারের সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি/হত্যা/আহত করা, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ, ইয়াবা, ভায়াগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেটসহ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের চোরাচালান, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকদ্রব্য পাচার, বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া/আটক, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম/বাংলাদেশে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করানো, মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক নির্মাণকাজ, উভয় দেশের সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণকাজ, বাংলাবান্ধা আইসিপিতে দর্শক গ্যালারি নির্মাণ, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা (সিবিএমপি) বাস্তবায়নে যৌথ টহল পরিচালনা, রিজিয়ন/ফ্রন্টিয়ার পর্যায়ের অফিসারদের নিয়মিত বৈঠক আয়োজন, পার্বত্য অঞ্চলে হিল ফ্লাইং প্রশিক্ষণ ও অপারেশন পরিচালনা এবং উভয় বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও বিরাজমান সৌহার্দ্য বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।