সিলেটে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা, স্বামী-ভাশুর গ্রেপ্তার
সিলেটের জৈন্তাপুরে জাহানারা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে তাঁর স্বামী, ভাশুরসহ শ্বশুরবাড়ির চারজনের নামে মামলা হয়েছে। নিহত গৃহবধূর বাবার করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁর মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জাহানারা বেগমের স্বামী সাব্বির আহমদ (২৮) ও ভাশুর জুবায়ের আহমদ (৩০) গ্রেপ্তার হয়েছেন।
নিহত জাহানারা বেগম সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা মোহাম্মদপুর গ্রামের জাহের মিয়ার মেয়ে। তাঁর স্বামীর বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার কেন্দ্রী গ্রামে।
গত রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে স্বামীর বাড়িতে আগুনে দগ্ধ হন জাহানারা। ওই দিন রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেন জাহানারার বাবা জাহের মিয়া।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রী গ্রামের সাব্বির আহমদের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পান প্রতিবেশীরা। এ সময় সাব্বির আহমদের স্ত্রী জাহানার বেগম দগ্ধ হয়েছেন বলে ওই পরিবার থেকে তাঁদের জানানো হয়। পরে স্বজনেরা জাহানারাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান জাহানারা। খবর পেয়ে লাশটি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সাব্বির আহমদের বাড়িতে মা-বাবা, বড় ভাইসহ অনেকে থাকতেন। রোববার রাতের পর থেকে সাব্বিরের মা-বাবাকে পাওয়া যায়নি। আগুনে বাড়ির তেমন কিছু পুড়ে না গেলেও মেঝে ও বিছানায় অগ্নিকাণ্ডের আলামত পাওয়া গেছে। আটক সাব্বির আহমদ ও জুবায়ের আহমদের কাছে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন।
জাহানারার বাবা জাহের মিয়ার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য জাহানারাকে চাপ দিচ্ছিল সাব্বির। আমি টাকা দেব না বলার পর জাহানারাকে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়ে আসছিল সে। সাব্বির আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে গায়ে আগুন লাগিয়ে হত্যা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটি ঘরে রাতে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও থাকার কথা। কিন্তু আগুনে আমার মেয়ে ছাড়া পরিবারের আর কারও কিছু হয়নি।’
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ কাজ করছে। দলটি ঘটনার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ওই গৃহবধূর স্বামী ও ভাশুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা মামলা করার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পর আজ (মঙ্গলবার) পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।