সিঙ্গাপুরফেরতদের নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা
করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত ১০ দিনে দেশে ফিরেছেন ১ হাজার ১৮৫ জন বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে ৪১৫ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং বাকি ৭৭০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশফেরত ৭৭০ জন কোয়ারেন্টিনের শর্ত ভাঙলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে আসা শতাধিক শ্রমিক আশঙ্কা বাড়িয়েছেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশি ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। আমরা স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী তাঁদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলছি। যে–ই আসুক না কেন, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক। বিশেষ ফ্লাইটে এসব দেশ থেকে আরও কয়েক হাজার বাংলাদেশি আসবেন। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকেই আসবেন তিন হাজার প্রবাসী। কিন্তু যাঁরা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, তাঁরা নিয়ম না মানলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।’
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, যাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে, তাঁদের শারীরিক অবস্থাসহ সব তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই নিজেদের এলাকায় তাঁরা নজরদারিতে থাকবেন। আগের মতো ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ কম। তবে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশিরা ফেরত আসায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২১ মার্চ থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় কয়েক দফা এ নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও বাড়তে পারে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ১০টি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকায় এসেছে। এর মধ্যে নেপাল থেকে ১৩ জন, সৌদি আরব থেকে ৩২২ জন, থাইল্যান্ড থেকে ৪৮ জন, চেন্নাই থেকে ৪৯৭ জন, তুরস্ক থেকে ২০ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ৩০ জন, মালদ্বীপ থেকে ৭০ জন এবং সিঙ্গাপুর থেকে ১৮৫ জন বাংলাদেশি এসেছেন। সৌদি আরব থেকে আসা ৩০৯ বাংলাদেশিকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। একই ফ্লাইটে আসা সৌদি এয়ারলাইনসের ১৩ বাংলাদেশি কেবিন ক্রুকে রাজধানীর উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এরপর ২২ এপ্রিল সিঙ্গাপুর থেকে আসা ১৮৫ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১০৬ জনকেও বিমানবন্দর থেকে উত্তরার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে বিদেশফেরতদের মধ্যে যাঁরা মধ্যপ্রাচ্য ও থেকে দেশে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। যাঁরা ভারত বা অন্য দেশে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সেখানকার চিকিৎসা সনদ থাকলে হোম কোয়ারেন্টিনে, আর না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। বিদেশি পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে তাঁদের দেশের স্বাস্থ্যসনদ থাকা বাধ্যতামূলক। সনদ না থাকলে তাঁদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার একটি দেশের দুই নাগরিককে ঢাকা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তবে সিঙ্গাপুর থেকে গত বুধবার ফিরে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে বড় একটি অংশ ছিলেন শ্রমিক, যা কিনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলে জানালেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাজ্জাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আসা ১৮৫ জন যাত্রীর মধ্যে ১০২ ছিলেন শ্রমিক। তাঁদের সঙ্গে চারজন শ্রমিকের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শ্রমিকদের অনেকে একসঙ্গে অনেকটা ঠাসাঠাসি করে সেখানে বসবাস করতেন। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বড় একটি অংশ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। এ কারণে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। তাই ১০৬ জনকে আশকোনায় ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।