দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীকে সব সময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘কেবল সমুদ্রসীমা অর্জন নয়, এই সমুদ্রসম্পদ যেন দেশের উন্নয়নে ব্যয় হয়, সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা সুনীল অর্থনীতির পদক্ষেপ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছি।’
নৌবাহিনীর নতুন পাঁচটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ কমিশনিং উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজগুলোকে তিনি নৌবাহিনীতে কমিশনিং করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশাল এই সমুদ্রের সম্পদ আহরণ ও তাকে কাজে লাগানোই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আর জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সমুদ্রসীমাকে রক্ষায় নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করে আমরা গড়ে তুলছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
এ কমিশনিংয়ের ফলে দেশের জলসীমা সুরক্ষায় এবং নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল নতুন দুটি আধুনিক ফ্রিগেট বানৌজা ওমর ফারুক, আবু উবাইদাহ ও একটি করভেট যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাশা এবং দুটি জরিপ জাহাজ বানৌজা দর্শক ও তল্লাশী।
এর আগে চট্টগ্রামে বানৌজা ঈশা খান নৌ জেটিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাহাজগুলোর অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছেন, যা প্রশংসার দাবিদার।’ দেশের পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন, “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”, আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। কিন্তু যদি বাংলাদেশ কখনো বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাকে মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে চাই।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সুশৃঙ্খল সশস্ত্র বাহিনী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিপুলভাবে প্রশংসিত পেশাদার একটি বাহিনী।’ তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে আমাদের যুদ্ধজাহাজ সার্বক্ষণিকভাবে অংশগ্রহণ করছে। এই বছরের আগস্টে আমরা সেখানে আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি করভেট বানৌজা “সংগ্রাম” পাঠিয়েছি , যা বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানেও নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও এ বাহিনী নিয়মিতভাবে বহু জাতীয় এক্সারসাইজ, বঙ্গোপসাগরে ‘কো-অর্ডিনেটেড প্যাট্রল’ ও কূটনৈতিক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘মেরিটাইম সিকিউরিটি’ সুসংহত করে চলেছে। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপে যখন সুপেয় পানির অভাব হয়েছিল, তখন আমরা আমাদের নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে সুপেয় পানি সেখানে পাঠাই এবং তাদের সহযোগিতা করি।’ এভাবেই দেশে এবং প্রতিবেশী দেশেও নৌবাহিনী নানা রকম সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ায় এই বাহিনীকে “কর্মমুখর” আখ্যায়িত করে তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
‘নতুন কমিশনপ্রাপ্ত জাহাজগুলো নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ ও বেগবান করবে বলেই বিশ্বাস করি’—বলেন প্রধানমন্ত্রী।