সার্চ কমিটি গঠন কীভাবে, সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা কী কী
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২–এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এখন আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। আজ রোববার এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এ অনুসন্ধান কমিটি হবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে তাঁরা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই ৫ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নতুন নির্বাচন কমিশন।
সার্চ কমিটি গঠন কীভাবে
আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি হবে। যোগ্যতা বিবেচনা করে তাঁরা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। তাঁদের মধ্য থেকে ৫ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নতুন নির্বাচন কমিশন।
বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এর আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সংসদে পাস হওয়া কোনো বিলে সম্মতি দিলে তা আইনে পরিণত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন আইনটির গেজেট প্রকাশ হওয়ায় এখন আসবে সার্চ কমিটির ঘোষণা, সেটাও গেজেট আকার প্রকাশ করা হলো।
রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। এ দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন হবেন নারী।
তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। এ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্য সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে।
সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে কয়েকটি যোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলো হলো—
*তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
*বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর।
*কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তাঁর অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা
সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে।
*আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে।
*দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে।
*কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে।
*নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।
*ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২–এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে।
*আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।
এর আগে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল–২০২২-এ সদয় সম্মতি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল–২০২২ জাতীয় সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব দিয়ে নীতিনির্ধারণী আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও গণফোরামের ১০ সাংসদ। আর বিলের ওপর সংশোধনী দিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ১২ সাংসদ। সাধারণত ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের সাংসদদের বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব আনতে দেখা যায় না।
বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হলেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী হবেন—এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। আগে তা ১০ দিন ছিল।
বিলের শিরোনামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এখন নাম হবে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’।