সাভারে ধাক্কা দেওয়া সেই বাসের চালক মারা গেছেন, তিনি ঘুমে ঢুলছিলেন
ঢাকার অদূরে সাভারের বলিয়ারপুরে গত রোববার যে বাসের ধাক্কায় অপর একটি বাসের চারজন নিহত হয়েছেন, সেই বাসের চালক মো. মারুফ হোসেন (২৭) মারা গেছেন। ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই চালককে খুঁজছিলেন। গতকাল সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে চালকের পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।
দুর্ঘটনার সময় চালক ক্লান্ত ছিলেন। তিনি ঢুলুঢুলু চোখে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন চালকের সহযোগী মো. তানভীর (২৫)। বারবার সতর্ক করার পরও চালক সতর্ক হননি বলে দাবি করেছেন তানভীর।
নিহত চালকের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত রোববার সাভারের বলিয়ারপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে মারুফের মা শামসুন্নাহার ছোট ছেলে সোহরাব হোসেনকে নিয়ে বলিয়ারপুরে ঘটনাস্থলে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের তিনি মারুফের পোশাকের বর্ণনা দিলে তাঁরা এমন একজনকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানান। পরে হাসপাতালে পৌঁছালে মারুফকে মৃত অবস্থায় পান পরিবারের সদস্যরা। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে শ্রীমঙ্গলে তাঁকে দাফন করা হয়।
মারুফ হোসেনের বাবা মো. মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পোলা আগে পিকআপ চালাইত। হঠাৎ কইরা একজনে ফোন দিয়া কইলো, “এই ছেলে (মারুফ) কে হয় আপনার? এই ছেলে অ্যাক্সিডেন্ট করছে।” তখন আমি জিজ্ঞেস করছি পিকআপে? তখন বলে না সেইফ লাইনের গাড়ি। এরপর তো শুনি মইরা গেছে। সে মারা গেছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে।’
নিহত মারুফের মা শামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী ফোনে বলে ছেলে বলিয়ারপুরে অ্যাক্সিডেন্ট করছে। আমি ছোট ছেলেকে সঙ্গে করে সেখানে যাই। আমার ছেলের সাদা চেক শার্ট ছিল। এটা শুনে সেখান থেকে একজন বলে আমার ছেলেকে সোহরাওয়ার্দীতে নিছে। তখন জ্যাম ঠেলে সোহরাওয়ার্দীতে যাইতে যাইতে আমার ছেলে গিয়ে দেখি মারা গেছে। তখন ১২টা–সাড়ে ১২টা বাজে। হাসপাতালে যারা কাজ করে, তারা বলল, এই ছেলে মা মা কইতে কইতে মারা গেল।’
এদিকে চালকের সহযোগী তানভীর এখন সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে তাঁর সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয়। এ সময় তানভীর বলেন, ‘ঢাকা থেকে গত শনিবার দিনের বেলা বাসটি ছেড়ে আবার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা হয়ে পরের দিন রোববার ঢাকায় ফিরছিল। যাওয়া এবং আসার পথে চালক মারুফ বারবার ঘুমিয়ে পড়ছিলেন। আমি বারবার তাঁকে সচেতন করছি। বলিয়ারপুরে আসার পর ডাইনে লন বলার সঙ্গে সঙ্গে বাসটি বাঁ পাশের একটি বাসকে বাড়ি মারে। এরপর ডান পাশে ট্রাকরে ধাক্কা মারে। আমি ছিটকে পরে যাই। আমি এক টিপের জন্য বাসটির হেলপার ছিলাম।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর আমরা জানতে পারি রাজধানীর শেরেবাংলা থানা–পুলিশ প্রাথমিক সুরতহাল করে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।’
প্রসঙ্গত, রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে একটি গরুবোঝাই ট্রাক ও সেইফ লাইন নামে একটি পরিবহন বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। সেইফ লাইন পরিবহনটি চলন্ত অবস্থায় আকস্মিকভাবে প্রথমে তাঁর বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসকে ধাক্কা দিয়ে ডান পাশে থাকা গরুবোঝাই ট্রাকটিকে সামনের দিকে ধাক্কা দিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে মহাসড়কের আরিচামুখী লেনে চলে আসে। এ সময় বিপরীত লেনের আরিচামুখী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি স্টাফ বাসের সামনে দিকে সজোরে ধাক্কা দেয় সেইফ লাইনের বাসটি। এতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের দুজন বিজ্ঞানী, একজন প্রকৌশলী ও স্টাফ বাসের চালক নিহত হন। আহত হন ১৫-২০ জন। এ ঘটনায় সাভার হাইওয়ে থানা–পুলিশ বাদী হয়ে রোববার রাতেই চালককে (মারুফ) আসামি করে মামলা করে।