সাবরিনা-আরিফ একে অন্যকে দুষছেন, দায় স্বীকার করেননি

আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবরিনা চৌধুরী। সংগৃহীত
আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবরিনা চৌধুরী। সংগৃহীত

পরীক্ষা না করেই করোনা শনাক্তের ফল দেওয়ার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেননি আরিফুল হক ও তাঁর স্ত্রী সাবরিনা চৌধুরী। তাঁরা একে অন্যকে দোষারোপ করেছেন। তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, পারিপার্শ্বিক তথ্য–প্রমাণ এবং জেকেজির কর্মচারীদের দেওয়া তথ্যে তাঁদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত। তবে অভিযোগের দালিলিক প্রমাণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের জন্য দুজনকেই তাঁরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। 

নমুনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরীকে বুধবার চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। একই মামলায় ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আরিফুলের স্ত্রী সাবরিনা চৌধুরীর গতকাল বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আবারও রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আরিফুল ও সাবরিনার পৃথক বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। গতকাল তাঁদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ছিল। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে গতকাল তা পুরোপুরি করা সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেপ্তারের পর আরিফুল হক চৌধুরী প্রতারণার জন্য তাঁর স্ত্রী সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের চারজনকে দায়ী করেন। আর সাবরিনা সব জালিয়াতির জন্য তাঁর স্বামীকে দুষছেন। সাবরিনা দাবি করেছেন, জেকেজির জালিয়াতির বিষয়টি তিনি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানাকে আগেই জানিয়েছিলেন। আরিফুলের সঙ্গ ত্যাগ করে তিনি বাবার বাসায় চলে যান। জালিয়াতির সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। 

তবে নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেছেন, সাবরিনা তাঁর কাছে একবারই এসেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, স্বামী কর্মস্থলে গিয়ে তাঁকে মারধর করেছেন। তিনি জেকেজির সঙ্গে আর নেই। এ সময় তিনি জেকেজির জালিয়াতির বিষয়ে কিছু বলেননি। নাসিমা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যখন জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারে, তখন একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়। 

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান না বলে দাবি করেছেন। অথচ জেকেজি থেকে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে মাসিক যে বেতন নিতেন, তার স্লিপ তাঁরা সংগ্রহ করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয় গেটে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, এই কোম্পানিতে সাবরিনা ও আরিফের কার কী অবদান, কার কী দায়িত্ব ছিল, তা তদন্ত করে দেখা হবে।

বাসা থেকে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করা এবং পরীক্ষা ছাড়াই নমুনার ফল দেওয়ার অভিযোগে তেজগাঁও থানা–পুলিশ গত ২৩ জুন জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ জুলাই সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই মামলায় গ্রেপ্তার জেকেজির সাবেক কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর ও তাঁর স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারী আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, তাঁরা বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতেন। বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ও বিদেশিদের কাছ থেকে ১০০ ডলার নিতেন। নমুনা সংগ্রহের পর তা ড্রেনে বা ওয়াশরুমে ফেলে তাঁরা নষ্ট করে ফেলতেন। নমুনা সংগ্রহের সময় তাঁরা শারীরিক লক্ষণের বিষয়ে একটি ফরম পূরণ করতে বলতেন। সেই লক্ষণের আলোকেই নিজেদের মনমতো পরীক্ষার প্রতিবেদন দিতেন।