সাতছড়িতে এত গোলাবারুদ কোথা থেকে আসে?
গোলাবারুদ ধ্বংসের আওয়াজে কেঁপে কেঁপে উঠছিল পুরো বনাঞ্চল। আশপাশের মানুষের মনে তো ছিলই, আতঙ্কে ছোটাছুটি করছিল বনের পশুরাও। বিকট শব্দে আকাশে উড়ে যাচ্ছিল আশ্রয়হীন নানা রকমের পাখি।
গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জের সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল একে একে ১৩টি আরপিজি গোলার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে। গত শনিবার সাতছড়ি উদ্যানের ভেতর থেকে এই গোলা উদ্ধার করা হয়েছিল। হবিগঞ্জ আমলি আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে এগুলো ধ্বংস করা হয়।
দিনভর চলে তাঁদের এ কার্যক্রম। এ সময় এলাকার মানুষ নানা কৌতূহল নিয়ে ধ্বংসস্থল এলাকায় ভিড় করে। তবে সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা কাউকে কাছে ভিড়তে দেননি। পুরো এলাকা ছিল নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঘেরা। তখন উপস্থিত সব মানুষের একটিই প্রশ্ন ছিল, এত এত গোলাবারুদ ও অস্ত্র সাতছড়িতে আসে কোথা থেকে?
২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, ১টি রকেট লঞ্চার, ১৬টি মেশিনগান, ১টি বেটাগান, ৬টি এসএলআর, ১টি অটো রাইফেল, ৫টি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল ও প্রায় ১৬ হাজার গুলিসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার হয়। একই বছরের ১৬ অক্টোবর উদ্ধার করা হয় ৩টি মেশিনগান, ৪টি ব্যারেল, ৮টি ম্যাগাজিন, ২৫০টি গুলির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৮টি বেল্ট ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি রেডিও। এর এক দিন পর ১৭ অক্টোবর আবারও উদ্ধার করা হয় এসএমজি ও এলএমজির ৮ হাজার ৩৬০টি, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ১৫২টি, পিস্তলের ৫১৭টি, মেশিনগানের ৪২৫টিসহ মোট ৯ হাজার ৪৫৪টি বুলেট। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার করা হয় ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট। সর্বশেষ গত শনিবার উদ্ধার করা হয় ১৩টি আরপিজি গোলা, ১১টি রকেট লঞ্চারের চার্জার ও ১৩টি রাবার পাইপ।
সাতছড়ি এলাকার বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা পাহাড়ি এলাকার মানুষ। যদিও এলাকাটি ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা। তবে শান্ত ওই এলাকায় কখনো কোনো সহিংসতার বড় ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বারবার সাতছড়ি থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের বিষয়টি আমাদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।’
এদিকে সাতছড়িতে গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় পৃথক ছয়টি মামলা হয় সে সময়। এ মামলাগুলো তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা বিস্তারিত কোনো তথ্য না পাওয়ায় মামলাগুলো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন আদালতে। গত শনিবারের ঘটনায় আবারও চুনারুঘাট থানায় মামলা হয়েছে র্যাবের পক্ষ থেকে।
এ গোলাবারুদ উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা র্যাব-৭–এর অধিনায়ক (সিও) মো. মশিউর রহমানের কাছে অস্ত্রের উৎসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁরও জানা নেই। তবে উৎস খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
আগের ছয়টি মামলার বিষয়ে র্যাব-৯ সিলেট অঞ্চলের অধিনায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মেজর শওকাতুল মোনায়েম জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কারণ, তিনি বেশি দিন হয়নি এ অঞ্চলের দায়িত্ব নিয়েছেন।