সাজেকের রোমাঞ্চ
সাজেক রাঙামাটির সর্ব উত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়নও। আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। সাজেক রাঙামাটিতে হলেও এর যাতায়াত–সুবিধা খাগড়াছড়ি থেকে।
সাজেকে সারা বছর যাওয়া যায়। তবে বর্ষায় সাজেকের রূপ যেন শতগুণ বেড়ে যায়। পাহাড়ের কোলে মেঘের খেলা চলে রাতভর। হাজারো ফুট উঁচুতে মেঘের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার এক অন্য পৃথিবী সাজেক। সাজেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে হয় অন্য রকম এক প্রশান্তি।
পৃথিবীর এ যেন এক মনোরম ভূস্বর্গ। খাগড়াছড়ির বাঘাইহাট থেকে সাজেকের পথটি বেশ রোমাঞ্চকর। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে সারি সারি জিপ গাড়ি ছুটে চলার দৃশ্য মনকে আন্দোলিত করবে। সাজেক যাওয়া-আসার পথে আপনি দেখতে পাবেন হাজারো ছড়া (ঝরনা)। আসলে ঝরনার আসল রূপ হলো বর্ষায়। সাজেক বর্ষায় অন্য এক রূপ নেয়। চারদিকে যেন সবুজের মিছিল। কখনো বৃষ্টি, কখনো মেঘের ভেলায় ভাসানো পাহাড়। এ যেন প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৌন্দর্য!
সাজেকের ভোরটা খুবই সুন্দর। ভোরে উঠলে প্রকৃতির রূপ–লাবণ্য এখানে নানাভাবে দেখা যায়। এখানে একাকী মোটেও খারাপ লাগে না। উল্টো আরও বেশি ভালো লাগে প্রকৃতির এই স্বপ্নিল রাজ্যে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ঘরবসতি ও নির্জন প্রকৃতির সঙ্গে দারুণ এক সখ্য আর প্রেমের সঙ্গে এখানে আছে ভাসমান মেঘপুঞ্জ। পাহাড়ি মানুষগুলো খুব আন্তরিক আর সহজ–সরল। পাহাড়ি মানুষ খুব পরিশ্রমীও। সাজেক এখন পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। নানা রকম সুস্বাদু দেশি ফলমূল এখানে তাজা পাওয়া যায় ও খাওয়া যায়। আছে জনপ্রিয় ব্যাম্বো টিও।
ভ্রমণপিপাসু মানুষ এই সাজেকে এসে খুব ভালো সময় কাটাতে পারে। ভালো লাগার এক অনুভূতি বোঝা যায় সাজেকে। প্রকৃতি এখানে খুব আপন মনে বসবাস করে। মেঘগুলো ঠিক যেন ছুঁয়ে যায়, ধরতে মানা...ছুঁতে গেলেই উড়ে চলে যায়। সকালটা খুব আলতো, মেঘে মেঘে আবার মাখামাখিও...যেন সাজানো তুলোর বাগান।
সাজেকে যেতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। তবে ক্লান্তিগুলো উঁচুনিচু পথ পাড়ি দেওয়ার সময় মিলিয়ে যায়। অনেকগুলো রিসোর্ট আছে সাজেকে পছন্দমতো থাকার জন্য। পাহাড়ের চূড়ায় আছে কংলাক পাহাড়। এ অ্যাডভেঞ্চারের সাধ অন্য রকম। তবে মেঘের দেশে বেড়াতে গেলে একটু সময় নিয়ে যাওয়া ভালো।