সাংবাদিক শফিকুলের অপহরণস্থলে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন
ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল যেদিন গুম হন, সেদিন তিনি অফিসে পৌঁছানোর পর তাঁর কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে ওই ব্যক্তিদের শফিকুলের মোটরসাইকেল নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়। তিন ঘণ্টা পর তিনি যখন তাঁর হাতিরপুলের কার্যালয় ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, তখন ওই ব্যক্তিরাও ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
১০ মার্চ শফিকুল ইসলাম তাঁর বকশিবাজারের বাসা থেকে দৈনিক পক্ষকাল কার্যালয়ের উদ্দেশে বের হন। তিনি হাতিরপুলের মেহের টাওয়ারের কার্যালয়ে পৌঁছান বিকেল সোয়া চারটার দিকে। পৌনে সাতটা থেকে তাঁর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী পরদিন চকবাজার থানায় নিখোঁজ হওয়ার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের হস্তক্ষেপে চকবাজার থানায় শফিকুল ইসলামের ছেলে মনোরম পলক অপহরণের মামলা করেন।
যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেপ্তারের পর শফিকুল যুব মহিলা লীগ নেত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন ছবি ও এ সম্পর্কে পোস্ট দিচ্ছিলেন। ৯ মার্চ সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। শফিকুল ওই মামলার একজন আসামি।
গতকাল শনিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভিডিও ফুটেজসহ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি জানান, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের সন্দেহজনক আচরণ স্পষ্টতই প্রমাণ করে কাজলের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত শুরুর মাত্র এক দিন পরই তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছিল। ওই দিনের পর থেকেই আর তাঁর দেখা মেলেনি এবং তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে বা কোথায় আছেন, কিছুই জানা যায়নি।
সিসিটিভি ফুটেজে বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিট থেকে ৬টা ৫ মিনিটের মধ্যবর্তী ৬ মিনিট সময়ে তিনজন ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে মোটরবাইকটির কাছে যায়। দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা মোটরসাইকেলে কিছু একটা লাগাচ্ছেন। এরপর ৬টা ১৯ মিনিটে কাজলকে অন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে অফিস থেকে বের হয়ে নিজের বাইকের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। পরে তিনি ফিরে আসেন এবং সন্ধ্যা ৬টা ৫১ মিনিটে একা বাইকে চড়ে চলে যান। এরপর তাঁকে আর দেখা যায়নি। তিনি যখন মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যান, তাঁর একটু পর তাঁর পেছনে কাউকে ছুটে যেতে দেখা যায়।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, অ্যামনেস্টি একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে বলে তাঁরা শুনেছেন। তবে ওই ফুটেজ থেকে কাউকে শনাক্ত করা হয়নি। তাঁরা খোঁজখবর করছেন।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ অন্তত ৩৪ জন ব্যক্তি গুম হওয়ার অভিযোগ নথিবদ্ধ করেছে। তাঁদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে, ১৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং বাকি ৯ জনের ভাগ্য কী ঘটেছে, তা এখনো অজানা।
অ্যামনেস্টির সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘কাজল কোথায় কী অবস্থায় আছেন, তা অতিসত্বর প্রকাশ করতে এবং যদি রাষ্ট্রীয় হেফাজতে রাখা হয়ে থাকে, তাহলে দেরি না করে তাঁকে মুক্তি দিতে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’