রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাওয়া আলিয়া বেগমের কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে আসা ‘অজ্ঞাতনামা’ রোগীদের সঙ্গে। আলিয়া বেগম হয়ে ওঠেন তাদের আশ্রয়, অভিভাবক। সেবা করার পাশাপাশি ওই সব অসহায় মানুষের ঠিকানা খুঁজে বের করাটাই তাঁর কাজ। মঙ্গলবার রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে আলিয়া বেগম যখন বলছিলেন তাঁর গল্প, তখনই মিলনায়তনে উপস্থিত সবাই উপলব্ধি করেন, স্বেচ্ছাসেবা হলো অন্যের জন্য নিজের জীবনদান।
আলিয়া বেগমের মতো এ রকম আরও ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বেচ্ছাসেবার জন্য সম্মাননা দিয়েছে ভলান্টারি সার্ভিস ওভারসিজ (ভিএসও) ও প্রথম আলো। তাঁদের কেউ রক্তের প্রয়োজনে ছোটেন, কেউ পাখির জন্য মমতা দেখিয়ে উদাহরণ তৈরি করেছেন, আবার করোনা মহামারিতে অসহায়দের জন্য দেশের এমাথা-ওমাথা ছুটেছেন কেউ।
আমরা মনে করি, অর্থবিত্তই বোধ হয় আমাদের সুখী করে। কিন্তু আসলে তা নয়। মানুষ সুখী হয় সে যে কাজটা করে আনন্দ পায়, সেটি করতে পারলে।
ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০১৯ পেয়েছেন স্বাস্থ্য ক্যাটাগরিতে শিরিন বেগম ও আলিয়া বেগম, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম, পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণ ক্যাটাগরিতে কেয়ার ফর আনক্লেইমড বিস্ট (কাব), কর্মমুখী দক্ষতা উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি), শিক্ষা ক্যাটাগরিতে পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে এলিজা বিনতে এলাহী, কৃষি ক্যাটাগরিতে তালহা জুবাইর মাসরুর, বিশেষ কার্যক্রম ক্যাটাগরিতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিপ্লব সরকার। সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য চৌধুরী মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সম্মাননাপ্রাপ্তদের সামনে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে। যাঁরা সম্মাননা পেয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যাঁরা পাননি, তাঁরাও সবাই যোগ্য।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান সবুর খান বলেন, ‘আমরা মনে করি, অর্থবিত্তই বোধ হয় আমাদের সুখী করে। কিন্তু আসলে তা নয়। মানুষ সুখী হয় সে যে কাজটা করে আনন্দ পায়, সেটি করতে পারলে।’
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির বলেন, কাজ করে অনেকে হয়তো একটু স্বীকৃতি বা সম্মাননা চান। কারণ, এর প্রয়োজন আছে। স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি দিতে হবে। তাঁদের প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া তাঁর মতে, সারা দেশের স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে নেটওয়ার্কও গড়ে তোলা দরকার।
যাঁরা সম্মাননা পেয়েছেন, তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন জানিয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘এখানে যাঁরা সম্মাননা পেলেন, তাঁদের কথা শুনে, কাজ দেখে অনেক কিছু পেলাম।’
স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০১৯-এর জুরিবোর্ডের প্রধান ছিলেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, যাঁরা প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাঁরা সবাই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। সবাই সমাজের সেবা করছেন। সেখান থেকে বাছাই করা অনেক কঠিন ছিল।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ভিএসওর প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন লিড সালাহ্উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে আনাচে-কানাচে অনেকে স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের কাজ অমূল্য। দেশের, সমাজের, মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন। তাঁদের গল্প বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ভিএসও-প্রথম আলো চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০১৯-এর জুরিবোর্ডের আরও সদস্য ছিলেন অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুমিত আল রশিদ ও ইয়ুথ অপরচুনিটিজের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন নূর। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্রিমস ফর টুমরোর প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ পারভেজ, প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও ইভেন্ট প্রধান মুনির হাসান, প্রথম আলোর কালচারাল ইভেন্ট অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স কবির বকুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।