সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, হাইকোর্টে আসামির মৃত্যুদণ্ড

নিজের পরকীয়ার জন্য স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বর্বরোচিত ও অমানবিক পদ্ধতিতে হত্যা করেন তিনি, যা বিরলতম ঘটনা বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। পর্যবেক্ষণ আদালত বলেন, ‘আসামি যেভাবে তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে হত্যা করেছেন, তা সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এমন অপরাধ নমনীয় দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। এমন হত্যাকারী আদালত থেকে অনুকম্পা পেতে পারেন না।’

স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে হত্যার দায়ে হাইকোর্ট আসামি মো. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।

আদালত বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয়ে নিজের পরকীয়ার কারণে আসামি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে যেভাবে হত্যা করেছেন, তা হীন ও বিকৃত মানসিকতার। বর্বরোচিত ও অমানবিক এ পদ্ধতি (হত্যার) বিরলতম বিরল ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। তাঁকে (আলমগীর) মৃত্যুদণ্ড দেওয়াই উপযুক্ত।’

নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২২ জুন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে পেশায় পল্লিচিকিৎসক আলমগীর তাঁর স্ত্রী হাফেজা বেগম, ছেলে আশরাফুল ও তিন বছর বয়সী মেয়েকে হত্যা করেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর পাঠাকাতা গ্রামের আলমগীরের নিজ বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন হাফেজার ভাই মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। সেদিনই গ্রেপ্তার হন আলমগীর। পরে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসেন।

ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১ আগস্ট পিরোজপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে আলমগীরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার আগ থেকে এখনো আলমগীর পলাতক বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আইনি বিধান অনুসারে নিম্ন আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা নিশ্চিতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। এ অনুসারে নিম্ন আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এ ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ আসামি আলমগীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন।

আদালতে আসামি আলমগীরের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান খান শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পরকীয়ার কারণে আলমগীর যেভাবে তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে খুন করেছেন, তা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলে রায়ে এসেছে। আলমগীর ব্যথা কমানোর কথা বলে স্ত্রীকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেন এবং দুই সন্তানকে খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। পরে স্ত্রী ও সন্তানদের দা দিয়ে কুপিয়ে তিনি হত্যা করেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি এসব কথা বলেন। তবে ঘটনার পর ডাকাত এসে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রথমে ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করেন। আলমগীরের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট ওই পর্যবেক্ষণ দিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন।