‘সমস্যা’ জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি বিআইডব্লিউটিসি
এক মাসের মধ্যে চতুর্থ দফায় পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগল। গতকাল শুক্রবার সকালে ছোট আকারের ফেরি কাকলি সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে সেতু, ফেরির যাত্রী ও যানবাহনের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এর আগে তিনবার বহু প্রত্যাশার এই সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগে।
সকালের এ ঘটনায় সন্ধ্যায় ফেরিটির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. বাদল হোসেন ও হুইল সুকানি আবদুর রশিদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। সংস্থাটি বলেছে, ঝড়বৃষ্টির সময় সেখানে ফেরি না চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি। তবে পদ্মায় প্রবল স্রোতের মধ্যে সেখানে এই ফেরি চালানো নিরাপদ নয় বলে দুই দিন আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন মাস্টার বাদল হোসেন।
এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, এই ফেরি চেইনের মাধ্যমে (মেকানিক্যাল) নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রবল স্রোতের মধ্যে ফেরিটি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এতে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগতে পারে। তাই ফেরিটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মাষ্টার বাদল হোসেনের চিঠি আমলে নিয়ে ফেরি কাকলি এই রুট থেকে সরিয়ে নিলে শুক্রবারের ঘটনা ঘটতো না।
এ বিষয়ে বাদল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো নিজেদের সিদ্ধান্তে ফেরি বন্ধ রাখতে পারি না। স্যাররা চালাতে বললে তো চালাতে হবেই। নতুবা চাকরি থাকবে না।’ তিনি জানান, গত বুধবার বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম এই এলাকা পরিদর্শনে এলে ১৫–২০ জন মাষ্টার স্রোতের মধ্যে ফেরি চালানোয় নানা সমস্যা তুলে ধরেন।
বাদল হোসেনের চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদলসহ মাস্টাররা সমস্যার কথা জানিয়েছিল। স্যার (চেয়ারম্যান) তাদের সাথে কথা বলেছেন। এরপর তারা ফেরি চালাতে একমত হয়েছিল।’
গত ২০ জুলাই প্রথম পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগে। তারপর আরও দুই দফায় এ ঘটনা ঘটেছে। এতে দুটি পিলারের পাইল ক্যাপের আস্তর উঠে গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, এতে সেতুর কোনো ক্ষতি হয়নি। সেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনায় আগেও দুটি ফেরির মাস্টার ও সুকানিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিআইডব্লিউটিসি।
দুই মন্ত্রী যা বললেন
সকালে ঘটনার খবর শুনে পদ্মা সেতু এলাকায় যান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চালকদের দায়িত্বে উদাসীনতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেতু চালু হলে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দিতে ফেরিঘাট স্থানান্তর করা হবে।
বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। শর্ষের মধ্যে ভূত আছে কি না, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর প্রতিনিধি