সবুজ টিলায় ৪৫ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি
>
- জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সংঘমিত্বা সেবা সংঘ বিহারের অবস্থান।
- ১৮ বছর আগে পাহাড়ঘেরা স্থানে বিহারটি গড়ে ওঠে।
- গত বছর নভেম্বরে মূর্তির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
- মিয়ানমার থেকে আসা একজন শিল্পী এটি নির্মাণ করেছেন।
সবুজে ঢাকা টিলার ওপর ধ্যানে মগ্ন গৌতম বুদ্ধকে বেশ দূর থেকেই চোখে পড়ে। আসনে বসা বুদ্ধের মাথার পেছনে আকাশের পটভূমি। কাছাকাছি এলে থমকে দাঁড়াতে হয়। প্রশান্তি আর গভীর অনুভূতিতে মন আচ্ছন্ন হয়। বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের তাইনখালীপাড়ায় সংঘমিত্বা সেবা সংঘ বিহারে নির্মিত হয়েছে এই বুদ্ধমূর্তি। উচ্চতায় ৪৫ ফুট। ধ্যানরত অবস্থায় দেশে এত বড় বুদ্ধমূর্তি আর নেই বলে দাবি করছেন বিহার কর্তৃপক্ষ।
জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে রাজবিলা তাইনখালীপাড়ায় সংঘমিত্বা সেবা সংঘ বিহারের অবস্থান। ১৮ বছর আগে পাহাড়ঘেরা স্থানে বিহারটি গড়ে ওঠে। বিহার প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি আবাসিক বিদ্যালয় ও ধ্যানকেন্দ্র। বিহারের অধ্যক্ষ উ. উইসুধা মহাথের কম্পিউটার ভান্তে নামেও এলাকায় পরিচিত। মূলত তাঁর উদ্যোগেই এই মূর্তি নির্মিত হয়েছে। নির্মাণের খরচ এসেছে ভক্তদের দানের টাকা থেকে।
বিহার কর্তৃপক্ষ জানায়, মূর্তির ধ্যানের আসনের উচ্চতা ১২ ফুট। এর ওপর আসীন বুদ্ধমূর্তিটি ৩৩ ফুট উঁচু। এত বড় ধ্যানরত বুদ্ধমূর্তি দেশে এই প্রথমবারের মতো নির্মিত হলো বলে দাবি করেছে তারা। গত বছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বুদ্ধমূর্তিটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। মিয়ানমার থেকে আসা একজন শিল্পী এটি নির্মাণ করেছেন।
বিহারে নিয়মিত যাতায়াত করেন নীলাধন তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলেন, নানা ধর্মের মানুষ উ. উইসুধা মহাথেরর ভক্ত। দেশের বাইরেও তাঁর অনুসারী রয়েছেন। তাঁদের দানের টাকায় বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। আবাসিক বিদ্যালয়সহ সংঘমিত্বা সেবা সংঘের সবকিছুই দানের টাকায় চলে।
সংঘমিত্বা বিহারের উপাসক পাইমং মারমা বলেছেন, মিয়ানমারের স্থপতি দিয়ে বুদ্ধমূর্তি দুই বছর ধরে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর বুদ্ধমূর্তিটির অভিষেক হয়েছে।
উ. উইসুধা মহাথের বলেন, ধ্যানের আসনে ভাবনারত ৪৫ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। রামুতে শায়িত ও খাগড়াছড়িতে দণ্ডায়মান বড় বুদ্ধমূর্তি থাকলেও ধ্যানের আসনে ভাবনারত বড় আকারে মূর্তি কোথাও নেই।
বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেবল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ নয় মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ সবার দানের টাকায় এই বুদ্ধমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে। সব ধর্মের মানুষ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।
পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উ. তেজোপ্রিয় মহাথের বলেন, ধ্যানরত অবস্থায় বুদ্ধমূর্তির মধ্যে তাইনখালীপাড়ার সংঘমিত্বা বিহারটিই দেশের সবচেয়ে বড়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, ধ্যানরত বুদ্ধমূর্তির অনেক গুরুত্ব রয়েছে বৌদ্ধধর্মে। দেশে ধ্যানরত অবস্থায় এত বড় একটি বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ অত্যন্ত গৌরবের। নতুন এই বুদ্ধমূর্তি পর্যটনেও ভূমিকা রাখবে। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক আসবেন এটি দেখতে।