সবার আগে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিল সর্বকনিষ্ঠ রাব্বি
বগুড়ার সুবিল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ১৩ বছর ৬ মাস বয়সী রাব্বি রহমান আজ সোমবার বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত ১৫তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় নিয়ে সবার আগে সাঁতার শেষ করে। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশি সাঁতারুদের মধ্যে রাব্বি সর্বকনিষ্ঠ।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে তখন বেলা পৌনে একটা। বঙ্গোপসাগরের বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দিয়ে মাটি ছুঁল রাব্বি রহমানের পা। সৈকতে সাঁতার আয়োজনের স্বেচ্ছাসেবক ও পর্যটকদের ভিড়। সমস্বরে সবাই চিৎকার করে উঠল ‘পিচ্চিটা ফার্স্ট’। তিন-চারজন স্বেচ্ছাসেবক রাব্বিকে কোলে তুলে নিয়ে এলেন সৈকতে। বাবা সাঁতার প্রশিক্ষক আলালুর রহমান জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে।
বগুড়ার সুবিল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ১৩ বছর ৬ মাস বয়সী রাব্বি রহমান আজ সোমবার বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত ১৫তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় নিয়ে সবার আগে সাঁতার শেষ করে। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশি সাঁতারুদের মধ্যে রাব্বি সর্বকনিষ্ঠ।
সোমবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহ্ পরীর দ্বীপ জেটি থেকে শুরু হয় ফরচুন বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২০। এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪০ জন সাঁতারু একসঙ্গে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন।
২০০৬ সালের প্রথম আয়োজন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত টানা ১৫ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন সাঁতারু লিপটন সরকার। আজ ৫ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে তিনি সাঁতার সম্পন্ন করেন। লিপটন সরকারের পরিবারের আরও তিন সদস্য উৎসব সরকার, আলসাদ সরকার ও নাহিদ হাসান সফলভাবে সাঁতার শেষ করেন।
৩ ঘণ্টা ৩১ মিনিট সময় নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি এ নিয়ে তিনবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন। ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট সময় নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন মাদারীপুর জেলার সাঁতারু সুজা মোল্লা।
ফরাসি সাঁতারু সিগফ্রিড রে ৩ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নিয়ে সাঁতার শেষ করেন। বাংলা চ্যানেল সাঁতারে অংশ নেওয়া দুই নারী সাঁতারু রাজশাহীর আলমগীর সুইমিং ক্লাবের মৌনতা আফরিন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্রী সোমা রায় সাঁতার শেষ করেছেন।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক সাঁতারুর সঙ্গেই ছিল উদ্ধারকারী নৌকা ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সার্ভিস বোট। বিজয়ীদের সোমবার রাতেই পদক দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ ক্যামেরাম্যান মো. মনিরুজ্জামান এবার নিয়ে টানা ৯ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন। মালয়েশিয়া, জার্মানি ও থাইল্যান্ডে ট্রায়াথলনে ‘আয়রনম্যান’ খেতাব পাওয়া মোহাম্মদ শামসুজ্জামান এবার নিয়ে ছয়বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন।
প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আলী রওনক ইসলাম প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন এবার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিশু বিশ্বাস ও পুলিশ সার্জেন্ট মো. রাশেদুল ইসলামও চ্যানেল পাড়ি দেন।
সোমবার সকালে ১৬ কিলোমিটার দূরত্বের এই বাংলা চ্যানেলে সাঁতার শুরু করেছিলেন ৪৩ জন সাঁতারু। এর মধ্যে তিনজন সাঁতার শেষ করতে পারেননি। ৬৮ বছর বয়সী নেত্রকোনার সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য মাঝ দূরত্ব পর্যন্ত এসেও সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে পারেননি। জোয়ার শুরু হলে বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে সাহায্যকারী স্পিডবোটে তুলে আনা হয়। ফলে গতবার ৬৭ বছর বয়সে চ্যানেল পাড়ি দেওয়া মিজানুর রহমানের রেকর্ডটি বহাল থাকল।
ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার ও এক্সট্রিম বাংলা আয়োজিত বাংলা চ্যানেল সাঁতার এবারও উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলা চ্যানেলের আবিষ্কারক প্রয়াত কাজী হামিদুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে। ষড়জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার সর্বোচ্চসংখ্যক সাঁতারু যেমন অংশ নিলেন, তেমনি বেশির ভাগ সাঁতারু কম বয়সী।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০০ জন সাঁতারুকে নিয়ে বাংলা চ্যানেল সাঁতার আয়োজনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
সাঁতার আয়োজনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আমিরুল হক। সন্ধ্যায় সেন্ট মার্টিনে সমাপনী ঘোষণা করেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সেন্ট মার্টিন স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রেদোয়ান উল ইসলাম।
এবারের বাংলা চ্যানেল সাঁতারে সহ–আয়োজক বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও পর্যটন বোর্ড। আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্র্যান্ড ফরচুন। এ ছাড়া পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল ভিসা থিং ও এনসিসি ব্যাংক। আয়োজনের অংশীদার হিসেবে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্টুডিও ঢাকা ও ষড়জ এবং রেসকিউ পার্টনার হিসেবে ছিল বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।