ড্যাফোডিল পরিবার ও এটুআইয়ের আলোচনা সভা
সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চায়, এ ট্যাবু ভাঙতে হবে: অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেছেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার দক্ষতা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা উচিত। কে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করবে, কে টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণ করবে, আর কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ করবে, তা নির্ধারণ করা উচিত দক্ষতা বিবেচনা করে। সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। এই ট্যাবু ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উপলক্ষে ড্যাফোডিল পরিবার ও বাংলাদেশ সরকারের এক্সেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) যৌথ আয়োজনে ‘কোভিড-১৯ এবং তার পরবর্তী সময়ের প্রতিযোগিতামূলক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় আমরা কি প্রস্তুত?’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফেসবুক পেজে আলোচনা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। সেখানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নূর, ডিরেক্টরেট অব টেকনিক্যাল এডুকেশনের মহাপরিচালক মো. সানোয়ার হোসেন, এটুআই প্রকল্পের ফিউচার অব ওয়ার্ক ল্যাবের প্রধান আসাদ উজ জামান, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং প্রথম আলোর যুব প্রকল্প কর্মসূচির প্রধান মুনির হাসান। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএসডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির আগেও আমাদের দক্ষতার চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ একটু একটু করে মোকাবিলা করছিলাম। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এসে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা কতটুকু। বলতে দ্বিধা নেই যে আমরা অনেক বেশি সক্ষম। আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটাই প্রমাণ করে যে কোভিড–উত্তর সময়েও আমরা সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম।’
দীপু মনি আরও বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সব সময় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। আমাদের বড় বড় সব অর্জন তরুণদের হাত ধরে এসেছে।’ সুতরাং তরুণেরা এই সংকটও সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞানার্জন করা। পাশাপাশি জীবিকার যে দক্ষতা প্রয়োজন, সেটি অর্জন করা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় করতে পারছে কি না, সে ব্যাপারে আরও নজর দিতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে কি না, তা লক্ষ রাখতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ‘আমরা সব শিক্ষার্থীকে একই শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করছি। এটা ভুল। কারণ, সবার দক্ষতা একরকম নয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার দক্ষতা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা উচিত। কে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করবে, কে টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণ করবে, আর কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ করবে, তা নির্ধারণ করা উচিত দক্ষতা বিবেচনা করে।’ এ সময় তিনি সামাজিক ট্যাবু ভাঙার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে ট্যাবু রয়েছে। এ ধরনের শিক্ষাকে সম্মানের চোখে দেখা হয় না। ফলে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জন করতে যায়। সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চায়।’ এই ট্যাবু ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. নাসির উদ্দিন বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। করোনা মহামারির সময়ে এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষার আওতায় আনার চেষ্টা করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের শতবর্ষী ১৩টি কলেজ ও ৮টি মডেল কলেজে অনলাইনের মাধ্যমে নিয়মিত পাঠদান চলছে।
এ ছাড়া ১৭ হাজার ভিডিও লেকচার তৈরির কাজ চলছে বলে জানান ড. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, এসব লেকচার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকবে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে এসব ক্লাস দেখতে পারবেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের কথাও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভাবছে বলে জানান ড. নাসির উদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের প্রচুর দক্ষ কর্মী প্রয়োজন।’ সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য এখনই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মোহাম্মদ নূরুজ্জামান আরও বলেন, ‘কোভিড-উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের যেসব দক্ষতা প্রয়োজন হবে, সেগুলো হচ্ছে লিডারশিপ, দূরদর্শিতা, ইনোভেশন, ব্যবস্থাপনা, কৌশল ইত্যাদি।’ এসব দক্ষতা অর্জন করার জন্য তরুণ প্রজন্মকে এখন থেকেই প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। বিজ্ঞপ্তি