‘সবকিছুকে পণ্য বানালে জীবন অসহনীয় হয়ে যাবে’

বিনায়ক সেন

নব্য উদারবাদের নামে সবকিছুকে পণ্য বানানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। অর্থের বিনিময়ে সব সম্পর্ক ও বিষয়কে পণ্যে রূপান্তরিত করলে জীবন অসহনীয় হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শুক্রবার বিকেলে ‘নিউলিবারেল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: পিপল অন দ্য মারজিনস’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিনায়ক সেন। দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) বইটি প্রকাশ করেছে।

প্রকাশিত বইতে ১১ জন লেখকের লেখা স্থান পেয়েছে। বইটির সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্ক ইউনিভার্সিটির গবেষক মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান।

আলোচনায় বিনায়ক সেন বলেন, ‘সকল ধরনের সাংস্কৃতিক সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও রাজনীতিকে পণ্য বানাবেন না। এটা করা যাবে না। নব্য উদারবাদ বা জাতীয়তাবাদের নামেই হোক, এটাকে প্রতিরোধ করা দরকার।’

এ সময় ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, মানুষ নব্য উদারবাদ থেকে সামাজিক ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘ধনীরা ঋণ নিচ্ছে শতকরা ১২ ভাগ সুদে। গরিবরা টাকা নিচ্ছেন শতকরা ২২ ভাগ হারে। গরিবেরা শতকরা ৯৯ ভাগ ঋণ শোধ করছেন। আর ধনীরা শোধ করছেন প্রায় শতকরা শূন্য ভাগ। এখানে তো সামাজিক ন্যায়বিচার হচ্ছে না। তবে নব্য উদারবাদীরা বলবে যে, ওই গরিব লোকগুলো তো বেঁচে গেল ঋণ পেয়ে। না হলে তো মরেই যেত।’

অনুষ্ঠানে নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, ‘পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে দাঁড় করানো হয়েছে যে, যাঁরা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা বাজার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। দেখা যাচ্ছে, নব্য উদারবাদের সঙ্গে যুক্তদের একটা অংশ যত বড় শিক্ষিত তত বড় চোর। একজন জনগণের টাকা খরচ করে শিক্ষিত হবে, কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে লুটপাট করবে। এমন উচ্চশিক্ষার দরকার কী?’

নুরুল কবির আরও বলেন, সরকার আইনে শ্রমিকদের কল্যাণের কথা বলেছে। কিন্তু দেশে এমন একটি উদাহরণ পাওয়া যাবে না যেখানে বিনা সংগ্রামে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সরকার শিল্প পুলিশ গঠন করেছে। কিন্তু এই শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের জন্য আতঙ্ক হিসেবে কাজ করছে।

বইটির সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, জাতীয় পর্যায়ে নব্য উদারবাদ যেভাবেই দেখা হোক, ব্যক্তি পর্যায়ের ভাবনার সঙ্গে তা মেলে না। এই প্রান্তিক আলোচনাটাই বইয়ে এসেছে।