‘সব শেষ হয়ে গেল, আল্লাহ আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে মো. ফরহাদ বুকফাটা আর্তনাদ করে যাচ্ছিলেন দিবাগত রাত ১২টার আগে থেকে। এর কিছুক্ষণ আগে সীতাকুণ্ড থেকে তাঁর চাচাতো ভাই মো. মবিনুল হককে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় মবিনুলকে। ক্ষীণ আশা ছিল বেঁচে যাবেন তিনি। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই চিকিৎসক মবিনুলকে মৃত ঘোষণা করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে ফরহাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।
এই যখন অবস্থা তখন কে কার দিকে খেয়াল করবেন। তখন সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো কনটেইনার থেকে আহত ব্যক্তিদের মিছিল হাসপাতালে আসা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অজ্ঞাত আরেকজনের লাশ ঢোকানো হলো লাশঘরে। নাম–পরিচয় না জানায় তাঁর জন্য কান্না করারও কেউ নেই।
ওদিকে ফরহাদ হাসপাতালের একপাশে দাঁড়িয়ে কেবল কান্না করে যাচ্ছিলেন। সে কান্না থামায় এমন সাধ্য কার। কিছুক্ষণের মধ্যে ফরহাদের আরেক ভাই আবু তায়ীবসহ কয়েকজন হাসপাতালে আসেন। একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন। মবিনুলের এমন মৃত্যু ঠিক যেন দু:স্বপ্নের মতো। এমন কিছু হবে কেউ কল্পনাও করেনি।
মবিনুলের বাড়ি বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নে। বাবার নাম ফরিদুল আলম। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মবিনুল মেজ। চাচাতো ভাই আবু তায়ীব বলেন, মহসিন কলেজ থেকে অথর্নীতিতে স্নাতক শেষ করে মবিন বি এম কনটেইনারে যোগ দেন।
তায়ীব নিজেও বি এম কনটেইনারে চাকরি করেন। তিনি বলেন, গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি অফিস থেকে বের হন। তখন মবিন আইসিটি কাউন্টারে কতর্ব্যরত ছিলেন। হয়তো আগুন লাগার পর সে দেখতে ভেতরে গিয়েছিলেন। তখন অন্য কোনো বিস্ফোরণে আহত হন মবিন।
তায়ীবের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে মবিনের বাবা, চাচাসহ অনেক আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে পৌঁছান। লাশঘরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই। বাবা ফরিদুল আলম বলেন, ‘মাত্র ছয় মাস আগে ছেলে চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। কী খুশি ছিল। তাঁর বিয়ের আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। আল্লাহ আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে।’
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও তিনজনের লাশ ঢোকে লাশঘরে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। কারও স্বজন নেই। শুধু মবিনের স্বজনেরা সেখানে ভিড় করেন। রাত আড়াইটার দিকে মবিনের লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ ফাঁড়িতে ধরনা দেন তাঁর স্বজনেরা। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া লাশ এখনই দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয় পুলিশ ফাঁড়ি থেকে। বাধ্য হয়ে মবিনের লাশ পাহারা দিতে থাকেন স্বজনেরা।