সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনাই সংগ্রহ করা হয়নি

ছয় বছর পরও মামলাটির কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সন্দেহভাজনদের বাদ দিয়ে অন্তত ৫০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ।

সোহাগী জাহান তনু

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন তিনজনের নাম বলেছিল পরিবার। ওই তিনজন বাদে অন্তত ৫০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে গত ছয় বছরে শতাধিক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তারা। ফলাফল শূন্য।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউস এলাকায় কালভার্টের পাশের ঝোপ থেকে সোহাগী জাহানের লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনার আজ রোববার ছয় বছর হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁর পরিধেয় থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা তখন জানিয়েছিল, পরীক্ষায় কমপক্ষে তিনজনের ডিএনএর উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাঁদের শনাক্ত করতে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া প্রয়োজন। সে কাজই হয়নি বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে।

আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করি, মরার আগে যেন বিচারটা দেইখা যাইতে পারি।'
আনোয়ারা বেগম, তনুর মা

পুলিশ ফাঁড়ি, থানা, কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও সিআইডির হাত ঘুরে সোহাগী জাহান হত্যা মামলা এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। ২০২০ সালে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায়। এখন পর্যন্ত তারাও খুব একটা এগোতে পারেনি।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, আসামি শনাক্তে পিবিআই সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করবে। তবে এতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

সোহাগী জাহানের মা আনোয়ারা বেগম এখনো মনে করেন, তাঁর মেয়েকে হত্যার ঘটনায় সার্জেন্ট জাহিদ ও তাঁর স্ত্রীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। সৈনিক জাহিদ ও তাজুল সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন (২০ মার্চ ২০১৬) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে প্রথমে সোহাগী জাহান কুমিল্লা সেনানিবাসে সৈনিক জাহিদ এবং পরে সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যান। পরে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়।

সন্দেহভাজনেরা চাকরিতে বহাল রয়েছেন উল্লেখ করে আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই নেওয়ার পর একবার তারা যোগাযোগ করেছে। এখন সংস্থাটি কী করছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তিনি দাবি করেন, হত্যার আগে তাঁর মেয়েকে অচেতন করে নেওয়া হয়েছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমনটাই তিনি জেনেছেন।

সোহাগী জাহানের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে লেখা হয়, তাঁর চুলের দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক দুই ফুট, যা বেশির ভাগই ছিল কাটা। বাঁ কানের ওপরের অংশে কাটা দাগ ও রক্তের ছোপ ছিল। তাঁর পরনের কামিজ ছেঁড়া এবং ডান হাঁটুর ওপরের অংশের চামড়া ছিলা ছিল। পরনের কাপড় ও শরীরের নানান জায়গায় বালু পাওয়া যায়।

প্রথম দফা ময়নাতদন্তে সোহাগী জাহানের মৃত্যুর কারণ বা ধর্ষণের কোনো আলামত খুঁজে পাননি চিকিৎসকেরা। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে আদালতের নির্দেশে আবার তাঁর লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। লম্বা সময় পর জানা যায়, এই তদন্তেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি।

পিবিআই ও সিআইডি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সিআইডি সোহাগী জাহান হত্যা মামলার তদন্তের চেষ্টা করেছিল। তারা ৫০ থেকে ৬০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছিল। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ওই নমুনার প্রোফাইলিংয়ের কাজ হয়। হত্যাকাণ্ডের ১৭ মাসের মাথায় সিআইডির তদন্তদল ঢাকা সেনানিবাসে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে পারেনি।

সোহাগী জাহানের বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম প্রতিবছর ২০ মার্চ কুমিল্লার মুরাদনগরে গ্রামের বাড়িতে মেয়ের কবরে যান। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা জানান, সোহাগী জাহানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে মিলাদ মাহফিল হবে। গ্রামের দুটি মাদ্রাসায় তাঁর জন্য দোয়া করা হবে।

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করি, মরার আগে যেন বিচারটা দেইখা যাইতে পারি।’