সংসদে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা

কম দামে টিসিবির পণ্য পেতে নিম্নআয়ের মানুষের দীর্ঘ লাইন। সেক্টর-১২, উত্তরা, ঢাকা
ছবি: খালেদ সরকার

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন বিরোধী দলের দুই সদস্য। তাঁরা বলেছেন, বাজারে গেলে মনে হয় না দেশে সরকার আছে। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাংসদ মুজিবুল হক ও বিএনপি দলীয় সাংসদ হারুনুর রশীদ।

মুজিবুল হক বলেন, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের হাহাকার অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব নেই। খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০ লাখ টন চাল মজুত আছে। তাহলে চালের দাম বাড়ল কেন?

নিজে বাজারে যান, এমনটা জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, বাজারে গেলে মনে হয় না সরকার আছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে।

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন ভয়াবহ। এক কোটি পরিবারকে টিসিবির পণ্য দেওয়া হচ্ছে। দুই কেজি তেল, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। এই পুরো প্যাকেজ কিনতে গরিব মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে। কারও হয়তো শুধু চাল বা ডাল দরকার, খেজুর দরকার নেই, কিন্তু তিনি চাইলেও শুধু ডাল বা চাল নিতে পারছেন না।

‘সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি’ মন্তব্য করে হারুন বলেন, রড, সিমেন্ট, ইট, বালু এসবেরও দাম বেড়েছে। এখন নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সমালোচনা করে হারুন বলেন, আইজিপি যে ভাষায় কথা বলছেন পুলিশের পোশাক পরে, এ ভাষায় তিনি কথা বলতে পারেন না। এ ধরনের কথা বলতে হলে আইজিপিকে পুলিশের পোশাক ছেড়ে রাজনীতিতে নামার আহ্বান জানান তিনি।

হারুন তাঁর বক্তব্যে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ ডে পালনের সমালোচনা করেন। এ সময় স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন, আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম।’ এ সময় হারুন নিজেকে ছাত্রী বলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুটা হাস্যরস করেন। পরে হারুন নিজের বক্তব্য সংশোধন করেন।
পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, এক যুগ ধরে দেখা যাচ্ছে অপরাধ ঘটলে বিশেষ করে হত্যাকাণ্ড হলে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চায়। অথচ ফৌজদারি অপরাধ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই অপরাধের বিচার হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয় না। মানুষ বিচার চায় নির্বাহী বিভাগের প্রধানের কাছে।

সব হত্যাকাণ্ড সমানভাবে আলোচিত হয় না, উল্লেখ করে রুমিন বলেন, মূল ধারার গণমাধ্যমে দূরে থাক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণেও ব্যর্থ হয়। ভুক্তভোগী ‘ভাগ্যবান’ হলেই কেবল সেটা নিয়ে শোরগোল হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাওয়ার সুযোগ পায়।

রুমিন বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতি হত্যার পর ৮৮ বার সময় নিয়েছে পুলিশ। এখনো চার্জশিট দেয়নি। নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যার ঘটনায় ৯ বছরেও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ আছে, এই হত্যাকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী পরিবার যুক্ত।

সম্প্রতি কলেজছাত্রী সামিয়া হত্যার প্রসঙ্গে বিএনপির সাংসদ রুমিন বলেন, সামিয়ার মা–বাবা বলেছেন তাঁরা বিচার চান না। বিচার নেই, কার কাছে বিচার চাইবেন। তাই তাঁরা আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছেন। এখন মানুষ এ দেশে নাগরিক নয়, প্রজার মতো হয়ে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ হত্যার শিকার হলেও বিচার পাবেন না।