সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে প্রধান ফটকে বিজ্ঞপ্তি

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নওয়াববাড়ী সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে প্রধান ফটকে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।  ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা  l প্রথম আলো
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নওয়াববাড়ী সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে প্রধান ফটকে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা l প্রথম আলো

অবশেষে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নওয়াববাড়িকে (মোহাম্মদ আলী প্যালেস) সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে সাইনবোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক পরিচালকের পক্ষ থেকে বাড়িটির প্রধান ফটকে সাইনবোর্ডটি টাঙানো হয়।
সেই সঙ্গে ভেতরে মোহাম্মদ আলী জাদুঘরের সামনে নওয়াব প্যালেসকে পুরাকীর্তি ঘোষণা করে এটি সংরক্ষণে সরকারি সিদ্ধান্তের গেজেটের অনুলিপি টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি এই পুরাকীর্তির কোনো রকম ধ্বংস বা অনিষ্ট সাধন করলে, এর কোনো বিকৃতি বা অঙ্গচ্ছেদ ঘটালে, এর কোনো অংশের ওপর লিখলে বা খোদাই করলে, কোনো চিহ্ন বা দাগ কাটলে, ১৯৬৮ সালের ১৪ নম্বর পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারার অধীনে তিনি সর্বাধিক একবছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’
এর একদিন আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা নওয়াবের তিন উত্তরসূরি সৈয়দ ওমর আলী চৌধুরী, হামদে আলী চৌধুরী ও সৈয়দ হাম্মাদ আলী চৌধুরীর নামে চিঠি পাঠিয়ে প্যালেস সংরক্ষণে সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানান। সৈয়দ হাম্মাদ আলীর পক্ষ থেকে নওয়াবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক জাহিদুল ইসলাম খান চিঠিটি গ্রহণ করেন। জাহিদুল ইসলাম চিঠি গ্রহণের সত্যতা প্রথম আলোর কাছে নিশ্চিত করেছেন।
নাহিদ সুলতানা বলেন, মোহাম্মদ আলী প্যালেস এখন সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত এই নওয়াববাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান ফটকে সাইনবোর্ডে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নীল রঙের বিজ্ঞপ্তি শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া প্যালেসের ভেতরে জাদুঘরের সামনে ঝুলছে সরকারি গেজেটের লেমিনেটিং করা অনুলিপি। নওয়াববাড়ির একজন কর্মচারী বলেন, এখনো সরকারের পক্ষ থেকে এই প্যালেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘নওয়াব প্যালেস সংরক্ষণের সরকারি সিদ্ধান্তের গেজেটের কপি কয়েক দিন আগে হাতে পেয়েছি। এখন সরকারিভাবে প্যালেসের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি। মন্ত্রণালয় যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা হবে।’
এই ‘নওয়াব প্যালেস’ ওয়াক্ফ সম্পত্তি হলেও এটিকে পৈতৃক সম্পত্তি দেখিয়ে পরিবারের উত্তরসূরিদের কাছ থেকে গত ১৫ এপ্রিল গোপনে দলিল করে নেন বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান, সহসভাপতি শফিকুল হাসান ও সাবেক সহসভাপতি আবদুল গফুর। ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করে মোহাম্মদ আলী প্যালেসের নামফলক ঢেকে দিয়ে সেখানে নিজেদের নামের ফলক বসিয়েছিলেন তাঁরা।
নওয়াববাড়ি বিক্রির তৎপরতা নিয়ে প্রথম আলোতে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ‘বিক্রি হয়ে যাচ্ছে নওয়াববাড়ি’ এবং গত ১৯ এপ্রিল ‘বগুড়ার ঐতিহ্য কি হারিয়ে যাবে?’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।