শোভাযাত্রায় মঙ্গলধ্বনি
নতুন বাংলা বছরের প্রথম দিনটিতে সকাল থেকেই ছিল প্রচণ্ড গরম। তা উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও লাগোয়া ‘ছবির হাট’ হয়ে ওঠে লোকারণ্য। শাহবাগ মোড় থেকে চারুকলার পথে মানুষ আর মানুষ। সবার উদ্দেশ্য একটাই—রাজধানীতে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে ওঠা মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া।
সকাল সাড়ে নয়টায় পুরো এলাকা যেন জনসমুদ্র। মানুষের কোলাহল, গান, ঢাকঢোল আর বাঁশির শব্দের ঐকতানে মুখর হয়ে উঠল চারুকলা চত্বর। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির পর একসময় শোভাযাত্রা নেমে পড়ল পথে। পুরো সড়ক যেন রূপ নিল এক চলমান রঙের মেলায়।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রতীকী শিল্পকর্ম তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে অস্থির এ সময়ে শান্তি ও মঙ্গলের আকাঙ্ক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বহন করা শিল্প-উপকরণগুলো ছিল যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। শোভাযাত্রায় ছিল নানা রং, নকশা আর আকারের মুখোশ, শোলার পাখি, প্যাঁচা, প্রজাপতি, খরগোশ ও টেপা পুতুল, ঢাল-ঢোল-বাঁশি, লাঠি-বর্শা, তির-ধনুক ইত্যাদি রাজ্যের লোকজ সংস্কৃতির উপকরণ।
‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত এবারের শোভাযাত্রায় বরাবরের মতোই উঠে আসে এই জনপদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এক বর্ণিল ছবি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর শিল্পকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত বিভিন্ন শিল্পকাঠামো ছিল এবার।
শোভাযাত্রার প্রথম দিকে ছিল সুখের প্রতীক লক্ষ্মীপ্যাঁচা। এর পাশেই শান্তি আর নির্ভরতার বার্তাবহ ‘মা ও শিশু’ শীর্ষক শিল্প-কাঠামোটি। ১৭ ফুট উচ্চতার এই শিল্পকর্মে মায়ের এক হাতের বন্ধনে শিশু আর অপর হাতে পানির কলসি।
শোভাযাত্রায় পবিত্রতা ও সরলতার প্রতীক হিসেবে ছিল মায়াবী হরিণশাবকের কাঠামো। সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে দুই পাশে দুটি ছোট মাছ নিয়ে এগিয়ে চলছিল বিশালাকৃতি মা-মাছ।