শুরু হচ্ছে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব
ক্লাসে কোন ছেলেটি ফার্স্ট হয়?—প্রশ্নের উত্তরে কেউ হাত তুলে বলে, ‘যে বুঝে বুঝে পড়বে’, কেউ বলে, ‘যে নম্বর বেশি পাবে’, আবার কারও কণ্ঠে শোনা গেল, ‘যে মুখস্থ করার চেয়ে অল্প সময়ে বুঝে বুঝে পড়ে, সেই ছাত্র ক্লাসে ফার্স্ট হয়’।
একটি প্রশ্নের বিপরীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থীর এমন পাল্টাপাল্টি যুক্তিতে আজ বৃহস্পতিবার জমে ওঠে কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনের অডিটরিয়াম। পুষ্টি–প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় বিশাল এই অডিটরিয়ামে তারা জড়ো হয়।
দেশের ৪০টি অঞ্চলে শুরু হতে যাচ্ছে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা। আঞ্চলিক পর্ব শেষে নভেম্বর মাসে রাজধানী ঢাকায় আয়োজন করা হবে চূড়ান্ত পর্ব। এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবারের এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
কর্মশালায় সনাতনী বিতর্কের সংজ্ঞা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করেন সাবেক বিতার্কিক গালিব ইবনে আনোয়ারুল আজিম, বিতর্কের প্রয়োজনীয়তার ওপর সাবেক বিতার্কিক উত্তম রায় এবং দলগত কার্যক্রম ও স্ক্রিপ্টের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন রনি। আলোচকেরা বলেন, বিতর্ক করলে একজন গায়কের মতো সেলিব্রিটি হওয়া যায় না। তবে বিতর্ক চর্চা করতে করতে শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনে ভালো হওয়া যায়, মেধাবী হওয়া যায়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিতর্ক মানুষকে তৈরি করে। কোন মানুষকে তৈরি করে, যে মানুষটি সবার অধিকার সম্পর্কে সচেতন। তিনি বলেন, খোলা মন নিয়ে বিতর্ক করতে হবে। মাতৃভাষার ওপর দখল থাকতে হবে। ইংরেজি যত কম ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় কথা বলতে হবে। ইউটিউবে বিতর্কগুলো শুনতে হবে। বিতর্কের জন্য ভালো প্রস্তুতি থাকতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনা মানে শুধু বই নিয়ে থাকলে চলবে না, প্রকৃতিকে দেখতে হবে। বিতর্কে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং ফলাফল শেষে জয়-পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নিতে হবে।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, বিতর্ক যাঁরা করেন, তাঁদের কোনো কিছু মানানো যায় না। তাঁরা শুধু বিতর্ক করেন। বিতর্ক পরাজয় মেনে নিতে শেখায়। বিতর্ক করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে, সুন্দর করে কথা বলতে হবে।
টি কে গ্রুপের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) মোহাম্মদ মোফাচ্ছেল হক বলেন, টি কে গ্রুপের ৪০টি ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে টি কে গ্রুপ সরকারের যাবতীয় উন্নয়নে কাজ করছে। শুধু ব্যবসা ক্ষেত্রে নয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবায়ও অবদান রাখছে টি কে গ্রুপ। স্কুল বিতর্ক উৎসব পুষ্টিময় হবে। এই প্রতিযোগিতা জাতীয় নয়, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
কর্মশালা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান। কর্মশালা পরিচালনা করেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক রাশেদুল আলম। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টি কে গ্রুপের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) মোহাম্মদ মোফাচ্ছেল হক। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন টি কে গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (সেলস কনজ্যুমার ডিভিশন) মো. আলম চৌধুরী, হেড অব ব্র্যান্ড মো. ইব্রাহিম খলিল, ব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ড) এস এম সামিউর রহমান ও প্রথম আলোর ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক কবির বকুল।
কর্মশালা শেষে ‘তরুণেরা বর্তমানের, ভবিষ্যতের নয়’ বিষয়ের ওপর প্রীতি বিতর্ক হয়। এর পক্ষে অংশ নেন বিজয়া রাণী বিশ্বাস, মিনহাজুল আবেদীন ও এহসানুর রহমান আবীর। বিপক্ষে তন্ময় আহমেদ, ইসরাত জাহান নূর ইভা ও সাহিদা ফাতেমা। বিচারক ছিলেন যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, সাবেক বিতার্কিক রাজিয়া রহমান জলি ও প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন।