শিশুসন্তান হত্যা: আপিলে বাবার সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমে ১০ বছর কারাদণ্ড

সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে চার বছর বয়সী শিশুসন্তানকে হত্যার মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড হয়, যা হাইকোর্টে বহাল থাকে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থেকে জেল আপিল করেন শিশুটির বাবা মো. জসীম। এই আপিল আংশিক মঞ্জুর করে আজ মঙ্গলবার রায় দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ জসীমের সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে ২০০৭ সাল থেকে কারাগারে থাকা জসীমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে জসীমের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত হিসেবে আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

রায়ের পর বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগ জসীমকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় শাস্তি বহাল না রেখে দণ্ডবিধির ৩০৪-এর পার্ট-২-তে ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন। ২০০৭ সাল থেকে জসীম কারাগারে আছেন। এ হিসাবে তাঁর ১০ বছরের সাজাভোগ শেষ হয়ে গেছে। অন্য কোনো মামলায় জসীম গ্রেপ্তার না থাকলে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আইনজীবী সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিলের মধ্যে মেহেন্দীগঞ্জে শিশু শামীম হত্যার ঘটনা ঘটে। জসীমের শ্বশুরবাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও শিশু শামীম থাকত। ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ রাতে ভাত খাওয়ার সময় জসীম তাঁর শাশুড়ির কাছে দুই হাজার টাকা চান। তখন তাঁর শাশুড়ি জসীমকে ঝাড়ুপেটা করেন। শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে জসীম তাঁর শিশুসন্তান শামীমকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে শিশুটিকে গলাটিপে হত্যা করে কচুরিপানার নিচে রেখে দেন জসীম।

ওই ঘটনায় ২০০৭ সালের ২ এপ্রিল শিশুটির মা ফাতেমা বেগম তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মেহেন্দীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এই মামলায় ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই বিচারক আদালত রায় দেন। রায়ে জসীমের মৃত্যুদণ্ড হয়। এর বিরুদ্ধে জসীমের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে জসীমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এর বিরুদ্ধে একই বছর জসীম জেল আপিল করেন। এই জেল আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।

জসীমের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জসীমকে তাঁর শাশুড়ি ঝাড়ুপেটা করেন। তাঁর শিশুসন্তানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে শিশুটি আঘাত পায়। পরে শিশুটিকে গলাটিপে হত্যা করে কচুরিপানার নিচে রেখে দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে শিশুটিকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না বাবার। শাশুড়ির আচরণে জসীমের নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে শুনানিতে বলেছি। আপিল বিভাগ জসীমের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। অন্য মামলা না থাকলে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’