শিশু হত্যাকারীকে কঠোর সাজা অবশ্যই পেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রতিটি শিশুর জন্য সুন্দর ভবিষ্যতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিশু হত্যা এবং নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু–কিশোর পরিষদ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা শিশু নির্যাতন বা শিশু হত্যা করবে, তাদের কঠোর থেকে কঠোরতম সাজা পেতে হবে, অবশ্যই পেতে হবে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অন্যায়-অবিচার কখনই বরদাশত করা হবে না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের শিশুরা আর কখনই যেন এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। প্রত্যেকটি শিশু যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। আর প্রতিটি শিশুর জীবন যেন অর্থবহ হয়। তা নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের খুনিদের বিচার না করে বরং আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে সে সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে খুনিদের পুরস্কৃত করা শিশু–নারী হত্যাসহ হত্যা, খুন এবং নির্যাতনকে উৎসাহিত করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবা, মা-ভাইয়ের খুনিদের বিচার চাইতে পারিনি, এমনকি একটি মামলাও আমাদের করতে দেওয়া হয়নি।’
সম্প্রতি সমাজে গর্হিত অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে একজন বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন পিতার নিজের শিশুপুত্রকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন (পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট) নারী-শিশুসহ জাতির পিতা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিচার হলে সমাজে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারত না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা “শিশু অধিকার আইন” প্রণয়ন করে যান। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করে নীতিমালা, আইন, শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ তাদের বেড়ে ওঠা, খেলাধুলাসহ সবকিছুর ব্যবস্থাই ধীরে ধীরে করেছি।’
শিশুদের ভেতরকার মেধা, মনন ও শক্তিকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একই সঙ্গে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্নভাবে আমাদের শিশুরা যাতে গড়ে উঠতে পারে, সে জন্য কম্পিউটারশিক্ষা থেকে শুরু করে প্রযুক্তিশিক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।’
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সংগঠনের সদস্যসচিব সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ, উপদেষ্টা তরফদার রুহুল আমিন এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত সারা দেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি এবং সারা দেশ থেকে আগত শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজ না করে, সে ধরনের ব্যবস্থাও তাঁর সরকার নিয়েছে। এমনকি তাদের শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে, এমনকি ঝরে পড়া শিশু এবং যারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল, সেসব শিশুদেরও শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আর এতিম এবং প্রতিবন্ধী ও অটিজম–আক্রান্ত শিশুদের জন্যও কর্মসূচি নিয়েছে। তিনি অটিজম–আক্রান্ত শিশুদের আপন করে নিয়ে সমাজের মূল স্রোতোধারায় সম্পৃক্ত করার জন্যও অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু–কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আজকে এখানে যেসব শিশু উপস্থিত রয়েছে তাদের একটা কথাই বলব, তোমাদের আশপাশে যখন কোনো প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক বা দরিদ্র শিশু দেখবে তাদের কখনো অবহেলা কোরো না। তাদের আপন করে নিও। তাদের পাশে থেকো, তাদের সহযোগিতা কোরো। কারণ, তারাও তোমাদের মতোই একজন। যেন কোনোভাবেই তারা অবহেলার শিকার না হয়।’
ছোটবেলার শিক্ষা ‘কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না’র প্রসঙ্গও এ সময় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে এটা করা নিষ্ঠুরতা, এটা বলা অমানবিকতা। আমাদের শিশুরা নিশ্চই তা করবে না।’
বক্তৃতাপর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেন। অমিতসম্ভাবনাময় রাসেলকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট কালরাতে জাতির পিতার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতক চক্র।