শহুরে তরুণেরা সময় কাটান ইন্টারনেটে
পড়াশোনা ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে ব্যস্ততার ফাঁকে প্রতীক হকের অবসর মেলে কম। যতটুকুই মেলে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও গেম খেলেই কাটে। রাজধানীর তরুণদের অবসরে সময় কাটানোর চিত্র ভিন্ন। তাঁরা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও ইন্টারনেটে সময় কাটান বেশি।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ শেষ বর্ষে পড়ছেন প্রতীক হক। পাশাপাশি চাকরি। তরুণদের অবসর নিয়ে বলেন, ‘আমার মনে হয়, সোশ্যাল মিডিয়া ও গেম খেলে তরুণেরা বেশি সময় কাটায়। টিভি দেখার পরিমাণ কম।’ তবে সময় পেলে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন প্রচুর।
তরুণদের ভাবনা জানতে প্রথম আলোর উদ্যোগে ওআরজি-কোয়েস্ট গত মার্চ মাসে সারা দেশের ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১ হাজার ২০০ তরুণের ওপর জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেশের অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তরুণদের অবসরে সময় কাটানো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। জরিপ অনুযায়ী, ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ অবসরে টিভি দেখেন। আড্ডা দিতে পছন্দ করেন ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ। তবে এ জরিপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানোর হার ৪১ দশমিক ১। কিন্তু রাজধানীর তরুণদের মধ্যে এর হার সবচেয়ে বেশি। জরিপ নিয়ে আজ বেশ কয়েকজন তরুণদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। তরুণদের বেশ কয়েকজন বলেন, খেলা দেখার জন্য তাঁরা শুধু টিভির ওপর নির্ভর করেন। নাটক দেখেন ইউটিউবে।
লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমি রহমান ফুরসত পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন। এর মধ্যে ভার্চ্যুয়াল আড্ডাটাও হয়। তাঁর বন্ধু মুনিয়া খন্দকার আবার বই পড়তে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় খুব বই পড়তাম। কিন্তু এখন সেটা কিছুটা কমেছে। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন্ড পাল্টায়। এখন বাইরে খাওয়া ঘোরাঘুরি বেড়েছে। এগুলো এড়ানো যায় না। এর ফাঁকে ফাঁকেই বই পড়ি।’ জরিপেও বই পড়ার পরিমাণ ৩০ শতাংশ।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে শহুরে তরুণেরা খাওয়ার সময়কে বেছে নেন। প্রথম আলোর জরিপে এর পরিমাণ ৪৩ শতাংশ। পরিবারের সবাই মিলে বাইরে খেতে গেলে বা বাসায় খাওয়ার সময়ে গল্প করা হয়। তরুণ কর্মজীবী শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘সপ্তাহে অন্তত নির্দিষ্ট একটি টাইমে ফ্যামিলিকে নিয়ে বাইরে খেতে যাই। সেখানেই আমাদের অনেক আড্ডা হয়। এ ছাড়া রাতে চেষ্টা করি বাসায় সবার সঙ্গে খেতে।’ তিনি আরও বলেন, শহরের বেশির ভাগ মানুষ ব্যস্ত থাকে। আলাদা করে শুধু গল্পের জন্য সময় হয় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসান সংবাদের উৎস হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নেন। তিনি বলেন, ‘এখন যেকোনো খবর দেখা যায়, ফেসবুকে আগে ছড়ায়। এরপরে টিভি বা পত্রিকায় আসে। তবে, সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অনলাইনে খবর পড়ি।’
শহরের অনেক তরুণই ঘুমিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। তবে কর্মজীবী-শিক্ষার্থী সব তরুণই ভার্চ্যুয়াল বা একসঙ্গে বসে যেভাবেই হোক আড্ডাকে প্রাধান্য দিলেন।