২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শহীদজায়া মুশতারী শফীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

শহীদজায়া মুশতারী শফীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। জাতীয় শহীদ মিনার, ২১ ডিসেম্বর।ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় শহীদ মিনারে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধে বেগম মুশতারী শফীর অবদানের কথা তুলে ধরেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফসহ বিশিষ্টজনেরা।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মুশতারী শফীর জানাজা হয়। শব্দসৈনিক বেগম মুশতারীর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীর। ৮৪ বছর বয়সী মুশতারী শফী কিডনি, রক্তে সংক্রমণসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা মুশতারী শফীকে। এরপর কিছুটা সুস্থ হয়ে এক দফা বাসা ঘুরে ১৪ ডিসেম্বর থেকে তিনি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শহীদজায়া মুশতারী শফীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় মরদেহের সামনে তাঁর মেয়েসহ স্বজনেরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজার পর বেলা দুইটার দিকে বেগম মুশতারী শফীর মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের শহীদ মিনারে নেওয়া হবে তাঁর মরদেহ। সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন, সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন শহীদজায়ার প্রতি। নগরের জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে জানাজা শেষে চট্টগ্রামের চৈতন্য গলির কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ এপ্রিল মুশতারী শফীর স্বামী চিকিৎসক মোহাম্মদ শফী ও ছোট ভাই এহসানুল হক আনসারীকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ৭ সন্তান নিয়ে ভারতে শরণার্থী হিসেবে যাওয়ার আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলার মুখে চৈতন্য গলির ওই কবরস্থানে সন্তানদের নিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন লড়াকু এই নারী।

শহীদজায়া মুশতারী শফীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের নেতারা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ২১ ডিসেম্বর
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন বেগম মুশতারী শফী। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে তাঁকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। ২০২০ সালে পেয়েছেন বেগম রোকেয়া পদক। চট্টগ্রামে নারী অধিকার আদায় ও সুরক্ষার জন্য দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশ ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠক এই নারী ছিলেন চট্টগ্রাম উদীচীর সভাপতি।

বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মালেকা বেগমসহ বিশিষ্টজনেরা।