২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শর্তসাপেক্ষে রাশেদ চিশতীর জামিন বহাল, মুক্তি মিলছে না

রাশেদুল হক চিশতী। ছবি: সংগৃহীত
রাশেদুল হক চিশতী। ছবি: সংগৃহীত

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে করা পৃথক তিনটি মামলায় ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীকে নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন শর্তসাপেক্ষে বহাল রাখা হয়েছে। নিম্ন আদালতের জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা পৃথক তিনটি আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

শর্তের মধ্যে রাশেদ চিশতীর পাসপোর্ট আদালতে জমা রাখতে হবে, অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগ করতে পারবেন না, মামলার তদন্তকাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, ফারমার্স ব্যাংকে (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) প্রবেশ করতে পারবেন না এবং নতুন করে তাঁর জামিননামা দাখিল করতে হবে। তবে অপর একটি মামলায় জামিন স্থগিত থাকায় রাশেদ চিশতী এখনই কারামুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

পৃথক চারটি মামলায় গত ১৮ ও ১৯ মে ঢাকার আদালত থেকে জামিন পান রাশেদ চিশতী। এই জামিনের বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে আবেদন করে। চারটির মধ্যে এক মামলার ক্ষেত্রে দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মে সর্বশেষ হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ দুদককে আপিল করতে বলে এর শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রাশেদ চিশতীর জামিন স্থগিত করেন। আর রাশেদ চিশতীর জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা অপর তিনটি আবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। রাশেদুল হক চিশতীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শাহরিয়া কবির বিপ্লব।

চারটি শর্তে রাশেদ চিশতীকে জামিন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, চারটি মামলার বাইরে অপর এক মামলায় টাঙ্গাইলের দায়রা আদালত থেকে রাশেদ চিশতী ২৭ মে জামিন পান। এই জামিনের বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে আবেদন করেছে, আগামীকাল বুধবার এই আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা। তিন মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে দুদক আবেদন করবে।

রাশেদ চিশতীর আইনজীবী শাহরিয়া কবির বিপ্লব প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাশেদ চিশতী কারাগারে আছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। এমনকি একটি মামলার এজাহারে রাশেদ চিশতীর নাম নেই। তিনটি মামলায় এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি। শুনানিতে এসব যুক্তি তুলে ধরা হয়। হাইকোর্ট তিনটি মামলায় শর্তসাপেক্ষে রাশেদ চিশতীকে নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন।

রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে পাঁচ মামলা
ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় পৃথক মামলা করে দুদক। আইনজীবীদের ভাষ্য, রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৯ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী, তাঁর স্ত্রী রুজী চিশতী ও ছেলে রাশেদুল হক চিশতীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল গুলশান থানায় একটি মামলা করে দুদক। এই মামলায় ১৯ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ হতে জামিন পান তিনি। এর বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে আবেদন করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে প্রথমে হাইকোর্টের অপর বেঞ্চ ২৮ মে পর্যন্ত রাশেদ চিশতীর জামিন স্থগিত করেন। পরে ২৮ মে আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রাশেদুল চিশতীর জামিন স্থগিত করা হয়।

আইনজীবীদের ভাষ্য, ১৩ কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৭৭২ টাকা আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে রাশেদুল চিশতীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এই মামলায় ১৮ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পান তিনি। মাহবুবুল হক চিশতীকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে অপর মামলাটি হয়। এই মামলায় গত ১৮ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পান তিনি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও দুদক আইনে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল গুলশান থানায় রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক। এই মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে ১৯ মে জামিন পান তিনি। এই তিন মামলায় রাশেদ চিশতীর জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়।

এ ছাড়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করে দুদক। এই মামলায় ২৭ মে টাঙ্গাইলের আদালত থেকে জামিন পান তিনি, এই জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা আবেদনের ওপর আগামীকাল বুধবার হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।