কোরবানি শেষে চামড়া সংগ্রহ চলছে পুরোদমে। তবে এবার চামড়ার পরিমাণ এবং দাম গতবারের চেয়ে কম বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিক্রেতারা। ফলে সাধারণ ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। কিন্তু আড়তদারদের মতে, চামড়ার দাম তেমন কমেনি।
বুধবার সকালে ঈদুল আজহার নামাজ শেষে কোরবানি শুরু হয়। এরপর প্রতিটি মহল্লা ও পাড়া থেকে চামড়া সংগ্রহে নেমে পড়েন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ছোট ব্যাপারীরা। তাঁরা ছোট–বড় চামড়া ১৩০ থেকে ৩০০ টাকায় পর্যন্ত সংগ্রহ করতে থাকেন। এরপর নগরের চৌমুহনী বাজারে চামড়া বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন তাঁরা। একই স্থানে অনেকে রিকশা বা ভ্যানযোগেও নিজেদের কোরবানি পশুর চামড়া এনে বিক্রি করে যান। তবে চামড়ার কাঙ্ক্ষিত দাম মৌসুমি ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
চৌমুহনী বাদল সওদাগর প্রতিবছর চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন। চামড়া সংগ্রহ করে তিনি নগরের মুরাদপুর চামড়ার আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। তাঁর হয়ে চামড়া সংগ্রহ করছিলেন মো. ইউনুছ। ইউনুছ বলেন, গতবার যে চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ছিল, এবার তা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দাম দিতে চাচ্ছেন আড়তদারেরা। এখন ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বাদল সওদাগার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার চামড়া কিনে রেখেছেন। চৌমুহনীর আরেক চামড়ার সংগ্রহাক ব্যবসায়ী হলেন মো. রুবেল। তিনিও অন্তত তিন হাজার চামড়া ওই সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করেছেন।
সরেজমিন বিকেলে দেখা গেছে, চৌমুহনীতে রাস্তার ওপর চামড়া নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। রয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও। আড়তদারদের প্রতিনিধিরা এখানে এসে চামড়া কিনে নিয়ে যাবেন। কিন্তু দরদামে মিলছে না তাঁদের সঙ্গে।
ফেরদৌস নামের এক সাধারণ ব্যবসায়ী বলেন, ‘৩০টির মতো চামড়া এনেছি। এখন দাম দিতে চায় কেনা দামের চেয়ে কম। কীভাবে বিক্রি করব। চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে কম।’
আড়তদারেরা চৌমুহনী গিয়ে দরদাম করছিলেন। সালাহউদ্দিন দুলাল নামের এক আড়তদার মৌসুমি ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে তা পিকআপে তুলছিলেন। এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি গড়ে ২৮০ টাকা করে অন্তত ৩০টি চামড়া কিনে নেন। ওই সাধারণ ব্যবসায়ী দাবি করেন, তিনি অনেকটা লোকসান দিয়ে চামড়া ছেড়ে দিয়েছেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, চামড়ার দাম আগের চেয়ে কিছুটা কম। তবে অত কম নয়। বড় চামড়া ঠিকই ৩৫০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে।
সাকিব নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ী ভ্যান গাড়িযোগে ১০-১২টি চামড়া নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন চৌমুহনী বাজার এলাকায়। কিন্তু দরদামে হচ্ছিল না আড়তদারদের সঙ্গে। সাকিব বলেন, এই চামড়াগুলো তাঁর মামা জসিম উদ্দিনের। জসিম পোশাককারখানায় কাজ করেন। প্রতিবছর কোরবানিতে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। এবারও করেছেন। তবে দাম আগের চেয়ে কম।
এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়াজাতকারী কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও মজুরি খরচ যোগ করতে হয়। আড়তদারদের মতে, তাতে ফুটপ্রতি ১২ টাকা খরচ হয়। খুচরা বাজার থেকে আড়তদারদের কাছে চামড়া চলে যায়। আজ দুপুরের পর থেকে কিছু কিছু চামড়া মুরাদপুরের হামজারবাগ এলাকার আড়তে যেতে শুরু করে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সহসভাপতি আবদুল কাদের বলেন, এবার সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হবে বলে আশাবাদী। কিছু চামড়া আসছে। আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবে। গ্রামের চামড়া আসবে আগামীকাল থেকে। বড় চামড়ার দাম রয়েছে। ছোট চামড়াগুলো একটু কম। সাধারণ ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যে দাম পাচ্ছেন না বলছেন, তা সত্য নয়।