- গণস্বাস্থ্যে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি
- পুলিশ বলছে,তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকার আশুলিয়ার মির্জানগরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবনসহ ছাত্রী হোস্টেল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন ও গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ বলছে, ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার দুই দফায় এ হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনার পর থেকে হোস্টেলের ছাত্রীসহ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে ও প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গতকাল শনিবার মানববন্ধন করেছেন। এর আগে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পিএইচএ ভবন, এর মূল ফটকসহ ছাত্রী হোস্টেল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, জমি দখলের ঘটনায় পিএইচএ ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলমগীর গত শুক্রবার আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ করেন। একই দিন হামলার ঘটনায় আরও একটি অভিযোগ করেন গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রায়হান কবির। গতকাল আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন র্যাবের গুলিতে পা হারানো গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমন হোসেন। ছাত্রী হোস্টেলে হামলার প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে তাঁর হাত ভেঙে দেওয়া হয়।
পৃথক চারটি অভিযোগে দ্য কটন টেক্সটাইল ক্র্যাফট লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী মহিবুর রব, মোহাম্মদ আলী, নাছির উদ্দিনসহ শতাধিক লোককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক সাইফুল ইসলাম, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মর্তুজা আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাছ, ফল চুরিসহ চাঁদা দাবি, মারধর এবং জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশুলিয়া থানায় একের পর এক অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছি। থানা কোনো মামলা বা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল দুপুরে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মানববন্ধন থেকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। মানববন্ধনে গণবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের অর্থবিষয়ক সম্পাদক খাদিজা আক্তার বলেন, পিএইচএ ভবনসহ ছাত্রী হোস্টেলে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এখনো নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
পরিদর্শনে কাদের সিদ্দিকী
এর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘হোস্টেলের মেয়েদের কাছে শুনলাম। স্বাধীন দেশে মেয়েরা এ রকম অসহায় বোধ করবে তা ভাবা যায় না। কোনো বিরোধ থাকলে তা আলোচনা করে মীমাংসা করা যেত।’ তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুনামের প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক কারণে এই মহান প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত হবে না।
এদিকে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান যৌথ বিবৃতিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর, গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন ও র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ এবং অনতিবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।