লাশ আসে, আলী নেওয়াজ দৌড়ে যান
‘যখন আগুন লাগে, তখন আমার ভাই ভিডিও কলে কথা বলছিল বাড়িতে। আগুন কীভাবে জ্বলছে, সবাইকে দেখাচ্ছিল। এ সময় একই এলাকার মহিউদ্দিনকেও ভিডিও কলে দেখা যায়। কিন্তু হঠাৎ বিকট শব্দে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। এর পর থেকে আমার ভাইয়ের নম্বরে ফোন করে পাচ্ছি না।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে দাঁড়িয়ে একনিশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন আলী নেওয়াজ। গতকাল শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর ভাই আবদুস সোবাহানকে জীবিত পাওয়ার আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছেন তিনি। তাই একের পর এক লাশ এলে আলী নেওয়াজ ছুটে যাচ্ছেন।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটারজুড়ে
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯, আগুন এখনও জ্বলছে
আশপাশের গ্রামগুলোয় ছাই আর পোড়া গন্ধে বিপাকে শিশু, বৃদ্ধরা
আলী নেওয়াজের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল এলাকায়। আট বছর আগে তাঁর ছোট ভাই আবদুস সোবাহান সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আইসিটি বিভাগে যোগ দেন। আবদুস সোবাহানের স্ত্রী ও আট মাসের একটি মেয়ে আছে।
ভিডিও কলে কথা বলার সময় সোবাহানের সঙ্গে যাঁকে দেখা যায়, সেই মহিউদ্দিনের লাশ পাওয়া গেছে। তাই ভাইয়ের খোঁজে আজ রোববার সকাল সকাল বাঁশখালী থেকে হাসপাতালে এসেছেন আলী নেওয়াজ। রায়হান নামে সোবাহানের এক সহকর্মীর সঙ্গে আলী নেওয়াজের দেখা হয়েছে। রায়হানও একই এলাকার বাসিন্দা।
রায়হান বলেন, আগুন লাগার পর সোবাহান দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি তখন লুঙ্গি পরা অবস্থায় ছিলেন। ভিডিওতেও তাঁকে ওই অবস্থায় দেখা গেছে। কিন্তু বিস্ফোরণের পর থেকে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে শহরের সব হাসপাতালে খোঁজা হয়েছে। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি।
ছয় ভাইয়ের মধ্যে সোবাহান পঞ্চম। প্রতি সপ্তাহ শেষে বাড়ি যেতেন তিনি। গতকাল শনিবার বাড়ি থেকে কর্মস্থলে আসেন। আর ওই দিন ঘটে এ দুর্ঘটনা। আলী নেওয়াজকে সবাই শহরে পাঠিয়েছেন সোবাহানের খোঁজ করার জন্য। আলী নেওয়াজ ভালো খবর নিয়ে আসবেন—এমন আশায় আছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
আলী নেওয়াজ হাসপাতালেই আছেন। যখনই কোনো লাশ আসছে, তখন দৌড়ে যান পরিচয় জানতে। এখন লাশটা মিলবে কি না, এমন কথাও ভাবছেন আলী নেওয়াজ। কারণ কিছু লাশ শনাক্ত করাও যাচ্ছে না। আলী নেওয়াজ বলেন, ‘জানি না কী হবে। ভাইকে পাব কি না। সবাইকে চেনাও যাচ্ছে না।’
শনিবার দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন তাঁদের সহকর্মী। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।