২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

র‌্যাবের কর্মকাণ্ডে তিন মাসে অগ্রগতি হয়েছে

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেছেন, ‘র‍্যাবের কর্মকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এটা উল্লেখ করার পরও বলছি, গত তিন মাসে আমরা এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ করেছি।’

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অষ্টম অংশীদারত্ব সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য কাজ চলছে। এ বিষয়ে আজ আমাদের হাতে বাংলাদেশ সরকারের কর্মপরিকল্পনা তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কারণ, সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

গত বছরের ডিসেম্বরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

অংশীদারত্ব সংলাপে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি, বিষয়টি জটিল ও সমস্যার ইস্যু। আমরা এ নিয়ে আজ আলোচনা করেছি। তবে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে একটি ছোট পরিসর ছিল বিষয়টি।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে র‍্যাবের কর্মকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এটা উল্লেখ করার পরও বলছি, গত তিন মাসে আমরা এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ করেছি।’

ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড আরও বলেন, ‘তবে বিষয়গুলো সুরাহার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন আলোচনায় আজ উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের যে জিরো টলারেন্স, সেটি তিনি উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য যে কাজ চলছে, সেটিও তিনি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আজ আমাদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের কর্মপরিকল্পনা তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কারণ, সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

একই প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা তাদের একটা নন পেপার (কূটনৈতিক পত্র) দিয়েছি। সেখানে র‍্যাবের কর্মকাণ্ড ও আমাদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তারা এটা ওয়াশিংটনে নিয়ে আলোচনা করবেন। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব। বিভিন্ন ফরম্যাটে এ নিয়ে আলোচনা হবে। আশা করছি, যথাসময়ে বিষয়টির সুরাহা করতে পারব।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে লিখিত বক্তৃতায় মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আলোচনায় র‍্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেছি। সন্ত্রাস ও আন্তসীমান্ত অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে এটি যে বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, শুধু সেটিই বলা হয়নি, পাশাপাশি সরকারের পদক্ষেপের কথাও জানানো হয়েছে।’

নিষেধাজ্ঞা রেখে সম্পর্ক নিবিড় করা কীভাবে সম্ভব, জানতে চাইলে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপ বসে থাকে না। যখন আমরা মৌলিক আইনের লঙ্ঘন দেখতে পাই, আমরা এ বিষয়ে কথা বলি। আমরা ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে কথা বলব। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখে, জানতে চাইলে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, ‘আমরা নিহত বাংলাদেশিদের স্মরণে শোক জানাচ্ছি। ইউক্রেনের সঙ্গে আপনাদেরও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের অনেক পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী সেখানে রয়েছেন। বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই জানে, বিনা উসকানিতে সেখানে নৃশংস আগ্রাসনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আগ্রাসন চালানো হয়েছে। রাশিয়ার এই অভিযানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না জড়িয়ে আমরা কূটনীতিকভাবে এর সমাধানের চেষ্টা করেছি। তাই সব গণতান্ত্রিক দেশকে এক হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই যুদ্ধ অবসানে সত্য উচ্চারণে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সবাই উচ্চকণ্ঠ হবে।’

আগামী ৪ এপ্রিল দুই দেশ সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র কোথায় নিয়ে যেতে চায়, জানতে চাইলে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। ব্যাপকতর ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের (আইপিএস) প্রেক্ষাপট থেকে বলা যায়, আমরা এ অঞ্চলের সব অংশীদার ও জোটের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা তো মনে করি, ক্রমবর্ধমান ব্যবসা ও বাণিজ্যের নানা ক্ষেত্রে আমরা আরও অনেক কিছু করতে পারি। প্রযুক্তি, অবকাঠামো, টেকসই অর্থনীতির পাশাপাশি বিশেষ করে সামুদ্রিক নিরাপত্তাসহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছু একসঙ্গে যেমন করতে পারি, তেমনি এই অঞ্চলের দেশগুলোকে যুক্ত করেও পারি। আমরা এটা করতে চাই।’

আইপিএসে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়ী উপাদান আছে কী না, এ প্রশ্নের উত্তরে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, ‘অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত সব উপাদান এতে রয়েছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ এতে (আইপিএস) যুক্ত হবে।’

আধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্র কিনতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুটি বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এ নিয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘জিসোমিয়া ও আকসা হচ্ছে, এটি নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রবেশদ্বার। আজ আমরা একটি ড্রাফট চুক্তি পাস করেছি। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে যে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক কিছু করতে পারব।’