রেশমা সুস্থ, তবে মাঝেমধ্যে ভয়ে কেঁপে উঠছেন
অন্ধকার এক কুঠুরি। আশপাশে ছড়ানো-ছিটানো সহকর্মীদের লাশ। সেখান থেকে বের হওয়া যাবে কি না, কে জানে! এ রকম অবস্থায় ১৭ দিন আটকে থেকেও যিনি ভয় পাননি, মুক্ত হওয়ার পর নিরাপদ আশ্রয়ে এসে মাঝেমধ্যেই ভয়ে কেঁপে উঠছেন সেই রেশমা।
সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রেশমাকে অভয় দিতে একজন সেবিকা সারাক্ষণ তাঁর পাশে আছেন। তবে রেশমা ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে সিএমএইচের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রেশমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান ওই হাসপাতালের মেডিকেল বিভাগের প্রধান কর্নেল আজিজুর রহমান। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে গত শুক্রবার বিকেলে পোশাককর্মী রেশমাকে বের করে আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দ্দী বলেন, ‘রেশমাকে উদ্ধার করার সময় যতটা সুস্থ মনে হয়েছিল, হাসপাতালে আনার পর দেখা গেছে, তার অবস্থা ততটা ভালো নয়। শাহীনাও রেশমার মতো হতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি।’
কাল বিকেলে সিএমএইচের সামনে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত হন। সেখানে জিওসির পক্ষে মেজর তৌহিদুজ্জামান জানান, রেশমার সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তাকে কোনো প্রশ্ন না করে শুধু ছবি নিতে পারবেন। জিওসি রেশমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন।’ এরপর তিনি আলোকচিত্র সাংবাদিকদের তিনটি দলে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে রেশমার ছবি তোলার জন্য হাসপাতালে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন।
জিওসি বলেন, ‘উদ্ধারের পর রেশমার সঙ্গে অল্পই কথা হয়েছে। তাকে বলেছিলাম, কেমন আছ? সে বলেছে, ভালো আছি। তার কী ইচ্ছা জানতে চাইলে সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিই। সে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চায়। এরপর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলে আসেন। তিনি রেশমাকে সান্ত্বনা দেন।’
মেজর জেনারেল সারওয়ার্দ্দী বলেন, ‘রেশমা তিনতলায় কাজ করত। তার সঙ্গে সেখানে আরও তিনজন ছিল। তারা মারা যায়। এরপর সে দোতলায় নেমে এসে ছোট্ট একটি জায়গায় আশ্রয় নেয়। তখন অন্যদের কাছে থাকা শুকনো খাবার সংগ্রহ করে এনেছিল সে। সেখানে সম্ভবত স্যুয়ারেজের একটি লাইনের পানি খেয়েছে। তবে শেষ দুই দিন তার খাবার ফুরিয়ে যায়।’
রেশমার পরনের কাপড় পরিচ্ছন্ন ছিল কেন, এ সম্পর্কে জিওসি বলেন, ‘তার পরনের পোশাক আমার কাছেও ফ্রেশ মনে হয়েছে। হয়তো সেখানে সে কোনো পোশাক পেতে পারে। হয়তো পোশাক বদলে থাকতে পারে। তবে এ মুহূর্তে তাকে এত কিছু বলার মতো পরিস্থিতি নেই। সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। তখন হয়তো সে আপনাদের সব কৌতূহলের জবাব দিতে পারবে।’
রেশমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কর্নেল আজিজুর রহমান বলেন, ‘উদ্ধার করার সময় রেশমা অত্যন্ত ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত ছিল। তার শরীরে পানিশূন্যতা ও লবণের ঘাটতি ছিল। কিডনি কার্যক্ষমতা ৩৫ ভাগে নেমে এসেছিল। চিকিৎসা দেওয়ার পর কিডনির কার্যক্ষমতা ৫০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। অন্য ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। তাকে তরল ও নরম খাবার দেওয়া হয়েছে। শরীরের কোথাও কোথাও সামান্য কিছু ছিঁড়ে যাওয়া ছাড়া গভীর কোনো ক্ষত বা আঘাত নেই।’
তবে শুক্রবার রাতে রেশমা ভালো করে ঘুমোতে পারেননি। এখন তাঁর প্রচুর ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজন। কাল দুপুরে ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল সিএমএইচে গিয়ে রেশমার অবস্থা পরীক্ষা করেছেন। পুরোপুরি সেরে উঠতে হয়তো কিছু সময় লাগবে।
চিকিৎসকেরা ধারণা করছেন, ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকার সময় হয়তো ‘কিছুটা ঘুম কিছুটা জাগ্রত’ এমন অবস্থায় ছিলেন রেশমা। এটা তাঁর স্মৃতিতে বিভ্রমের সৃষ্টি করতে পারে। তবে রেশমা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন বলে আশাবাদী চিকিৎসকেরা।
কাল সকালে মা জোবেদা ও ভাই জাহিদুল রেশমার সঙ্গে দেখা করেন। রেশমা তাঁদের চিনতে পেরেছেন এবং কথাও বলেছেন।