রিফাত হত্যায় মিন্নি জড়িত: তদন্ত কর্মকর্তা
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি জড়িত ছিলেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির আজ বুধবার এ কথা বলেছেন। হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় মূল হত্যাকারী নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে মিন্নি পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেন।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও নিহত ব্যক্তির স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করে বরগুনার পুলিশ। আজ পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বরগুনার বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ আদেশ দেন। আজই দুপুরে মিন্নিকে কড়া পুলিশ প্রহরায় আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির মিন্নিকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ গতকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৩ জুলাই রাতে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৮ দিন পর রিফাতের বাবা বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেন। রিফাতের বাবার অভিযোগের ফলে আলোচিত এই হত্যা মামলা নাটকীয় মোড় নেয়।
১৪ জুলাইয়ের এই মানববন্ধনের পর দুপুরে মিন্নি তাঁর বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, যাঁরা বরগুনায় ‘বন্ড ০০৭’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করিয়েছিলেন, তাঁরা খুবই ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী। এই ক্ষমতাবানেরা বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকা এবং এই হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তাঁর শ্বশুরকে চাপ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।
এরপর গতকাল মিন্নিকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ এই মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তাঁকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয়। বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।
আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনার আগের দিন মিন্নি নয়ন বন্ডদের বাড়িতে গিয়ে এই হত্যার পরিকল্পনা করে। এই হত্যাকাণ্ডের ৬ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এই হত্যায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সংশ্লিষ্টতার কথা জানায়।
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ফুটেজে মিন্নি রিফাত শরীফকে রক্ষার যে চেষ্টা করে, সেখানে সে নয়নকে জাপটে ধরলেও তাকে (মিন্নি) কোনো আঘাত করেনি। এটা ছিল লোকদেখানো। ঘটনার আগের দিন এবং ঘটনার পূর্বে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির মুঠোফোনের আলাপ-আলোচনা থেকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে।’