রিজার্ভের অর্থ চুরিতে ফিলিপাইনের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার ও অপরাধীদের শনাক্ত করতে ফিলিপাইনের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তির বৃত্তান্ত ও আর্থিক কিছু তথ্য দিতে বাংলাদেশ আজ মঙ্গলবার ফিলিপাইনকে অনুরোধ জানিয়েছে। ফিলিপাইন সে দেশের বিচার বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশকে তথ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আজ দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের সচিবপর্যায়ের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়াবলি) মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিন বছর বিরতির পর দুই দেশের সচিবদের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরিতে সহযোগিতা ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ও ফিলিপাইনে যাওয়া ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয় কয়েক মাসের মধ্যেই। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া এখনো অনিশ্চিত।
ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসি এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশকে কোনো অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়িত্ব অস্বীকার করে তারা বলেছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলা ও অসাবধানতার’ দায় বাংলাদেশকেই নিতে হবে। চুরি হওয়া অর্থ ফিলিপাইন থেকে অন্য দেশে পাচার হয়ে গেছে।
আজ ঢাকায় দুই দেশের সচিবদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুই দেশের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা জানি বিচারিক প্রক্রিয়া সব সময় একটু লম্বা হয়। কয়েকটি দেশে এ নিয়ে বিচার চলছে। ফিলিপাইন, বাংলাদেশ ও নিউইয়র্কে এ নিয়ে কিছু মামলা চলছে। আমরা কয়েকটি বিষয়ে তাদের সাহায্য চেয়েছি। যেমন চুরির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের পরিচয়। এই তথ্য তারা এখনো আমাদের দেয়নি। সেটা আমরা তাদের কাছে চেয়েছি। আমরা কিছু আর্থিক তথ্য চেয়েছি। সেটাও তারা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, অপরাধীদের পরিচয় ও আর্থিক তথ্যগুলোর নিষ্পত্তি হলে বাংলাদেশে যে মামলা হয়েছে, তার চার্জশিট দিতে সুবিধা হবে।’
মোমেন জানান, কোনো সময়সীমার উল্লেখ না করে ফিলিপাইন তাদের বিচার বিভাগের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে কথা দিয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘টাকা ফেরতের প্রসঙ্গে তারা ব্যাংক আরসিবিসিকে ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করার কথা জানিয়েছে। আমরা বলেছি, ওই টাকাটা আমাদের দেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। অবশ্য ওদের অন্য রকম যুক্তি আছে। কিছু টাকার এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি।’
আরসিবিসি ব্যাংকের ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা বাংলাদেশকে দেওয়ার ব্যাপারে ফিলিপাইনের যুক্তি কী, তা জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আমরা তো জানি, কিছু টাকা পাচার হয়ে গেছে। সেটার ব্যাপারে তদন্ত করতে আরও সময় লাগবে। ফিলিপাইনের ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘনের জন্য আরসিবিসিকে ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থের সঙ্গে এর কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাদের বলেছি, ওটা তোমরা আমাদের দিতে পারো। কারণ, ওই টাকা তো একই কারণে জরিমানা করা হয়েছে।’
ফিলিপাইনে এ নিয়ে যে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, তা শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে—এ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ার ওপর তো কারও কোনো হাত নেই। এটা তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সাইবার ক্রাইম (অন্তর্জাল অপরাধ) সাম্প্রতিক সময়ের নতুন এক চ্যালেঞ্জ। আজ বাংলাদেশ এ সমস্যার শিকার হয়েছে। কিন্তু অনেক দেশই এর শিকার হতে পারে। এর ঝুঁকি সবার আছে। সুতরাং আমরা তাদের বলেছি, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন নিজেদের মধ্যে আরও সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যার সুরাহা করতে পারলে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।’
মোমেন আরও বলেন, জাতিসংঘে সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় সনদ করা যায় কি না, তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। ওই কাঠামোর অনুপস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা গেলে তা অন্য দেশের জন্য মডেল হিসেবে থাকতে পারে।