রাতে সরিয়ে ফেলা হলো নামফলক!

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘নওয়াব প্যালেস’ (নওয়াব বাড়ি) পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে। এর মধ্যে গোপনে কিনে নেওয়া তিন ব্যবসায়ীর নাম লেখা সাইনবোর্ড, ব্যানার রাতারাতি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধান ফটকসহ ভেতরের সব স্থাপনায়। ছবিটি গতকাল বিকেলে তোলা l প্রথম আলো
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘নওয়াব প্যালেস’ (নওয়াব বাড়ি) পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে। এর মধ্যে গোপনে কিনে নেওয়া তিন ব্যবসায়ীর নাম লেখা সাইনবোর্ড, ব্যানার রাতারাতি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধান ফটকসহ ভেতরের সব স্থাপনায়। ছবিটি গতকাল বিকেলে তোলা l প্রথম আলো

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নওয়াব বাড়ি (নওয়াব প্যালেস) সংরক্ষণে সরকারি সিদ্ধান্ত হলেও গত রোববার রাতে সুযোগ বুঝে সরিয়ে ফেলা হয়েছে মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়ামের নামফলক। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে নওয়াব বাড়ির মালিকানার দাবিদার তিন ব্যক্তির নামের সাইনবোর্ড।
গতকাল সোমবার বিকেলে নওয়াব প্যালেসে গিয়ে দেখা যায়, এত দিন প্যালেসের ফটকে মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়ামের নামফলক শোভা পেলেও এখন সেখানে ক্রয়সূত্রে মালিক দাবিদার তিন ব্যবসায়ীর নাম শোভা পাচ্ছে। প্যালেসের একজন কর্মচারী বলেন, রোববার রাতে প্যালেসের ফটক থেকে মোহাম্মদ আলীর নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়। ফটকসহ প্যাসেলজুড়ে ক্রয়সূত্রে মালিক দাবিদার তিন ব্যবসায়ীর নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত নওয়াব প্যালেস ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইনে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ খবর জানার পর বগুড়ার প্রভাবশালী তিন ব্যবসায়ী রোববার রাতে মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়ামের নামফলক সরিয়ে সেখানে নিজেদের নামের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন।
নওয়াব প্যালেসের ফটকসহ ভেতরের একাধিক স্থানে যে তিন ব্যবসায়ীর নামের সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে, তাঁরা হলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান, সহসভাপতি ও হাসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল হাসান এবং সাবেক সহসভাপতি ও শাহ সুলতান গ্রুপের এমডি আবদুল গফুর। সরকারিভাবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে এই তিনজন প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, নওয়াব প্যালেস সরকার সংরক্ষণ করতে চাইলে তাঁরা প্রত্যেকে সাধুবাদ জানাবেন। কোনো ধরনের আপত্তি করবেন না। সরকার যখনই চাইবে, তখনই তাঁরা এটি সরকারকে দিয়ে দেবেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘নওয়াব প্যালেস পুরাকীর্তি হিসেবে সরকারিভাবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ছানিয়া আক্তার ১৯ এপ্রিল স্বাক্ষরিত এ চিঠির অনুলিপি ৩ মে হাতে পেয়েছি।’
ঐতিহ্য স্থাপনা রক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘নওয়াব প্যালেস সংরক্ষণে সরকারি সিদ্ধান্ত হওয়ায় এটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। এখন রাতের আঁধারে যেভাবে প্যালেস থেকে সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর নামফলক সরিয়ে ফেলা হলো, তাতে এই প্রাচীন ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বগুড়াবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই প্যালেস রক্ষা করা হবে।’
নওয়াব প্যালেস ওয়াক্ফ সম্পত্তি হলেও এটিকে ব্যক্তিমালিকানা দেখিয়ে নওয়াব পরিবারের দুই উত্তরসূরি সৈয়দ হামদে আলী ও সৈয়দ হাম্মাদ আলীর কাছ থেকে গত ১৫ এপ্রিল দলিল সম্পাদন করে নেন বগুড়ার ওই তিন ব্যবসায়ী। ১ একর ৫৫ শতকের মহামূল্যবান এই প্রাচীন স্থাপনাকে ‘সাধারণ বসতবাড়ি’ উল্লেখ করে দলিলে মাত্র ২৭ কোটি টাকা মূল্য দেখানো হয়। এ নিয়ে ১৯ এপ্রিল প্রথম আলোতে ‘বগুড়ার ঐতিহ্য কি হারিয়ে যাবে?’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়।