যে ৬টি সফট স্কিল ছাড়া ক্যারিয়ারে উন্নতি অসম্ভব
সফট স্কিল মানুষের এমন কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, যা অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করতে বা মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষকে কাজ করতে শেখায়। এই দক্ষতাগুলো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে, আস্থা বাড়াতে এবং দলগতভাবে কাজ করতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
পাঠ্যবই পড়ে অনেক সফট স্কিলই তৈরি করা সম্ভব নয়। সফট স্কিল বৃদ্ধি করতে চাইলে আগে জানতে হবে সফট স্কিল কী। তারপর সচেতনভাবে চর্চা করতে থাকলে সহজাতভাবেই নিজের সফট স্কিলগুলো বৃদ্ধি পাবে। ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে চাইলে বেশ কিছু সফট স্কিল অবশ্যই থাকতে হয়। নিয়োগকারীরা কর্মী নিয়োগের সময় একজন চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে আশা করেন—এমন ৬টি প্রধান সফট স্কিল নিচে উপস্থাপন করা হলো:
১. যোগাযোগ
যোগাযোগ দক্ষতা প্রতিটি কাজের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি চাকরিই করেন বা উদ্যোক্তাই হোন, আপনাকে গ্রাহক, ক্রেতা, বিক্রেতা, অন্য প্রতিষ্ঠানের লোকজন, সহকর্মী, নিয়োগকর্তাসহ আরও অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। মৌখিক ও লিখিত—দুই ধরনের যোগাযোগেই ভালো হতে হবে। এখন ই–মেইল ও এসএমএসের মাধ্যমেও অনেক লিখিত যোগাযোগ করতে হয়।
মনে রাখতে হবে ভালো যোগাযোগ রক্ষার্থে আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো শ্রোতাও হতে হবে। গ্রাহকসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে কাজে লাগে। প্রত্যেক নিয়োগকারীই চান তাঁর প্রতিষ্ঠানে এমন কর্মী নিয়োগ দিতে, যাঁরা সবার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন। আপনি যে উদেশ্যে যোগাযোগ করছেন, তা পূরণ হলেই বলা যাবে আপনার যোগাযোগ ক্ষমতা ভালো।
২. দলগত কাজ
দলগত কাজের মাধ্যমে একটি দলের প্রত্যেক সদস্যের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিশ্চিত করে সম্মিলিতভাবে ভালো ফল নিশ্চিত করা সম্ভব। দলে কোনো দুর্বল সদস্য থাকলেও দলগতভাবে কাজ করে তাঁদের কাজ শিখিয়ে নেওয়া যায় এবং তাঁদের সেরা কাজটি বের করে নেওয়া যায়। কাজের সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করতে পারলে দলের সবাই উৎসাহ নিয়ে কাজ করেন। তাই প্রতিষ্ঠানের উন্নতির লক্ষ্যে দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
৩. নেতৃত্বদানের ক্ষমতা
কর্মজীবনের প্রথম দিন থেকেই আপনি পুরো দলের বা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন, তা আশা না করা হলেও নিয়োগকারীরা অবশ্যই যাচাই করতে চান যে আপনি ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দান করতে পারবেন কি না। যদি আপনি নেতৃত্বদানের ক্ষমতা তৈরি করতে না পারেন, তাহলে আপনি কোনো দল চালাতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিষ্ঠানের উঁচু পদে বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে রাখা হবে না। তাই কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইলে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা তৈরি করুন।
৪. সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা
আপনার প্রতিষ্ঠানে কোনো সমস্যা বা সংকট তৈরি হলে শুধু সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সঙ্গে সম্ভাব্য কিছু সমাধানের কথাও জানান। এতে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বহুগুণ। তাই নিজের জ্ঞান বাড়াতে হবে, ভাবতে হবে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে হবে ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর আপনার কাজের মধ্যে সৃজনশীলতা না থাকলে শুধু গতানুগতিক কাজের মাধ্যমে আপনি অন্য সবার থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন না।
৫. চাপের মধ্যে কাজ করার ক্ষমতা ও সময় ব্যবস্থাপনা
আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করুন না কেন, আপনার কাজের চাপ থাকবেই। এটাই বাস্তবতা। আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও এই দক্ষতাগুলো চাওয়া হয়। আপনাকে একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে হবে এবং প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। যদি আপনি সব কাজ সামাল দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে না পারেন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে ক্ষেত্রে উন্নতি তো দূরের কথা, চাকরিতে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ভাবতে হবে, আপনি এখন যে কাজটি যত সময় নিয়ে করছেন, তা আরও কম সময়ে দক্ষতার সঙ্গে কীভাবে করা যায়। প্রয়োজনে অন্যের পরামর্শ নিন। একসঙ্গে একাধিক কাজ আসলে কোনো কাজটি আগে করবেন, তা ঊর্ধ্বতনের কাছে জেনে নিন। কাজের অগ্রাধিকার বুঝতে শিখুন।
৬. খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ও ইতিবাচক মনোভাব
ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চাইলে আপনাকে যে ধরনের প্রতিষ্ঠানেই কাজ করতে দেওয়া হোক না কেন, যে কাজের দায়িত্বই দেওয়া হোক না কেন বা যে কর্মপরিবেশেই কাজ করতে দেওয়া হোক না কেন, তার সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। নতুনকে স্বাগত জানাতে হবে।
পৃথিবী দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই টিকে থাকতে হলে এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকেও পরিবর্তিত ও উন্নত করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। সবার সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
সততা ও নৈতিকতা বজায় না রাখলে আপনি কারও আস্থা অর্জন করতে পারবেন না। আর আস্থা অর্জন ছাড়া উন্নতি অসম্ভব।