যুক্তরাষ্ট্রে তিনতলা বাড়ি: সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করল দুদক
‘অর্থ পাচার’ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে তিনতলা একটি বাড়ি কেনার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহাকেও আসামি করা হয়েছে। অর্থ পাচার ও বাড়ি কেনায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে অনন্ত কুমারের বিরুদ্ধে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ এ মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে ‘অবৈধভাবে’ অর্থ উপার্জন করে হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার কাছে তা পাচার করেছেন। এই অর্থ দিয়ে নিউ জার্সির জ্যাপার স্ট্রিটের বাড়িটি কিনেছেন। অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে দন্তচিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে সেখানে একটি বাড়ি কেনেন।
পরে অনন্ত কুমার ২০১৮ সালের ১২ জুনে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার নগদ অর্থ পরিশোধ করে আরেকটি বাড়ি কেনেন। অনন্ত কুমার সিনহার নামে নিউ জার্সির প্যাটারসনের ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৮ ডলার জমা হয়। এই অর্থ ইন্দোনেশিয়া ও কানাডা হয়ে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সেখানে জমা হয়েছে। ওই বাড়িটি কেনার জন্য অনন্ত কুমার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০ ডলারের নগদ চেক সংগ্রহ করতে বড় ভাই এস কে সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে আসেন। ওই সময় এস কে সিনহা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি ক্রয়ের জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ফান্ড পেয়েছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে এস কে সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে অবৈধভাবে টাকা অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় আমেরিকায় পাচার করেন এবং ছোট ভাইয়ের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করেন। সে টাকা দিয়েই ১৭৯ জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২ তে বাড়ি কেনেন। বাড়িটি ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে হলেও ‘পরোক্ষভাবে’ এস কে সিনহার বলেও মামলায় উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ৪(২) ও (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৯ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে দুদকের এক মামলায় এস কে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর ঢাকার উত্তরায় বেআইনিভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে সেখানে নয়তলা ভবন করার অভিযোগে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সব তথ্য উদ্ঘাটন করবেন: দুদকের সচিব
এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মামলার পর আজ বেলা দুইটায় এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিভিন্নভাবে অর্জিত অর্থ হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন। পরে সেই অর্থ তাঁর ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন এবং তা দিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার নগদ প্রদান করে বাড়ি ক্রয় করেন। এই কাজ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাড়িটি এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে, কিন্তু দুদক মামলার করল সিনহার নামে—সাংবাদিকেরা এর কারণ জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুদকের আইন এবং মানি লন্ডারিং আইনের যে ধারা রয়েছে, সেই ধারা মোতাবেক অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে অর্থ পাচারসংক্রান্ত অভিযোগের প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের সদয় সিদ্ধান্তক্রমে দুদক আজকে মামলাটি করেছে।’
অর্থ পাচারের প্রক্রিয়াটি কী ছিল, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের দুদকের সচিব বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটা আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা যিনি নিয়োজিত হবেন, তিনি সেই প্রক্রিয়া বলেন, কত টাকা কখন, কীভাবে নিয়েছেন— সব বিষয়ে তথ্য উদ্ঘাটন করবেন।’
এস কে সিনহার বহুবার বলেছেন, তিনি এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাঁকে দুদক দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দুদকের সচিব বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তো আসলে কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করতে পারবে না। দুর্নীতি দমন আইন মোতাবেক যে ক্ষমতা বা তফসিলে যে ধারা, সেই মোতাবেক কমিশন কাজ করছে।
এস কে সিনহাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদক কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, জানতে চাইলে দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যে তদন্তকারী কর্মকর্তা থাকবেন, সেই কর্মকর্তা তদন্তকালীন তাঁকে আইনি যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেই আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে যা যা করার দরকার, তা-ই করবেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদকের সচিব বলেন, এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১২ বছর সাজা হতে পারে।