যাত্রী কমেছে ৪০ শতাংশ, ফ্লাইট কমে যেতে পারে
দেশের ঢাকা-সৈয়দপুর আকাশপথে বেসরকারি একটি বিমান সংস্থার গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের ফ্লাইটে যাত্রী ছিল ৪৭ জন। অথচ এই উড়োজাহাজের ৭৪ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারে। ধারণক্ষমতার প্রায় ৩৫ শতাংশ কম যাত্রী ছিল ওই ফ্লাইটে।
এই চিত্র কেবল ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে নয়, দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটেই কম যাত্রী নিয়েই বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অভ্যন্তরীণ আকাশপথে সম্প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে এটি অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব শিগগিরই ফ্লাইটের সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হবে।
দেশে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়াও তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এই চারটি বিমান সংস্থার অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন ১৪০টির মতো ফ্লাইট চলাচল করে। এসব ফ্লাইটে প্রায় ১২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। সব ফ্লাইটই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে চলাচল করে। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো ৮০ শতাংশ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে যাতায়াত করছেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী ছিল প্রায় ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ছিল ৪৪ লাখ ৮২ হাজার। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রীসংখ্যা ছিল ৮২ লাখ ৬৪ হাজার এবং অভ্যন্তরীণ ছিল ৪১ লাখ ২৫ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুই রুটেই মোট ৭ লাখ যাত্রী বেড়েছে। যাত্রী বৃদ্ধির কারণে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যায় বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে। বাজারে নিয়ন্ত্রণ রাখতে উড়োজাহাজের সংখ্যাও বৃদ্ধি করে তারা। চলতি বছরই একাধিক উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করে ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে আগামী জুনে মধ্যে আসবে নতুন তিনটি নতুন ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ। রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষও নতুন উড়োজাহাজ আনার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত জানুয়ারি মাস থেকেই আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী হারাতে থাকে দেশীয় বিমান সংস্থাগুলো। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এর প্রভাব পড়ে অভ্যন্তরীণ রুটেও।
যাত্রী সংকটের কারণে তাই বিমান কর্তৃপক্ষ গত ১৫ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা-যশোর, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-সৈয়দপুর ও ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে মোট ১২টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। অন্য বিমান সংস্থাগুলোর ফ্লাইট সংখ্যা না কমলেও যাত্রী কমে গেছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক রুটের বহু যাত্রী দেশে ফিরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে করে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বেই বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকও আসছেন না। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যক্রমও কমে গেছে। এসব কারণে অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী কমে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে প্রায় ৪০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাংলাদেশে আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি বাজার রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এ খাতে বড় ধাক্কা এসে পড়েছে।
নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেজবাহ উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি। তবে সাত দিন ধরে যাত্রী খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে। সামনে আরও কমতে পারে। সামনে রমজান মাসের পর ঈদ আসছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যদি রোজার সময় পর্যন্ত থাকে, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
করোনাভাইরাসের প্রভাব কেটে গেলেও এই ধাক্কা সামাল দিতে বহু সময় লেগে যাবে বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। ফ্লাইট কমানো হলেও উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিমানবন্দরে পার্কিং চার্জ, উড়োজাহাজের লিজের টাকা ও ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে হবে।
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোকে বাঁচাতে বহু দেশের সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। এওএবির পক্ষ থেকে বর্তমান সংকটের সময় সিভিল এভিয়েশন চার্জ, যন্ত্রাংশ আমদানিতে অগ্রিম কর ও জ্বালানির ওপর আরোপিত কর বাতিলের প্রস্তাব সরকারকে দেওয়া হবে।