মেট্রোরেলের পথ, স্টেশন, ডিপোর অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তি সই

মেট্রোরেল স্থাপনের জন্য উড়ালপথের একাংশ নির্মাণ, নয়টি স্টেশন স্থাপন ও ডিপোর অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এসব কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার।
এসব কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তোয়াত চাই সুথি রাপা চুক্তিতে সই করেন। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই কোম্পানি সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে চলমান ঢাকা উড়ালসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১৪ সালে উড়ালসড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো মূল কাজই পুরোদমে শুরু হয়নি। আর চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনের কাজ করছে। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজের বড় অংশ বাস্তবায়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রকল্পও সময়মতো শেষ হয়নি।
ইতাল-থাই ও সিনোহাইড্রো যৌথভাবে মেট্রোরেলের ২, ৩ ও ৪ নম্বর প্যাকেজের কাজ পেয়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। বাকি পাঁচটি প্যাকেজে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত পথ নির্মাণ, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বসানো, ট্রেন কেনা এবং ডিপো এলাকার মাটি উন্নয়নের কাজ ভাগ করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্যাকেজ-২-এ বিরতিতে ট্রেন রাখার স্থান, ট্রেন মেরামত ও মালামালের গুদাম, প্রধান ওয়ার্কশপ, নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, জেনারেটর ও ইলেকট্রিক্যাল অবকাঠামো, ট্রেন ধোয়ার স্থান, বহুতল কার পার্কিংসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পরে এই উড়ালপথের ওপরই ট্রেনের জন্য লাইন বসানো হবে।
চুক্তি সইয়ের পর ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কাজ কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। সাতজন কনসালট্যান্ট ওই ঘটনায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় গতি স্তিমিত হয়ে যায় এবং প্রায় ছয় মাস পিছিয়ে যায়। এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।

সূত্র বলেছে, প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের কম।
মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত ১৬টি স্টেশন হচ্ছে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও হোটেল, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্র বলেছে, সরকার ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। বাকিটা পরের দুই বছরে বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপানের সংস্থা জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার।