মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পরও আসামি বলছেন - নুসরাত আত্মহত্যা করেছে
ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আফসার উদ্দিন দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ। তাঁর কাছে প্রমাণ আছে যে নুসরাত আত্মহত্যা করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণার পর আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আফসার চিৎকার করে এ কথা বলেন। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের ফাঁসানো হয়েছে।’ যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় সেই সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার প্রভাষক আফসার উদ্দিন।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তাঁরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন প্রিজনভ্যান থেকে বলেন, ‘আমি নির্দোষ। আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পেয়ে আমি বেরিয়ে আসব।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াসউদ্দিন নান্নু বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। এটি সাজানো রায়। এই রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উচ্চ আদালতে এটা টিকবে না। সবাই খালাস পাবে।’
এর আগে আদালতের এজলাসে রায় শোনার পর আসামিরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করেন। কেউ কেউ জানান উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তাঁরা। আসামিরা এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন।
গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা মাদ্রাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়।