২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির পথে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারছবি: আবদুস সালাম

এই তো সেই শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফটক। এখানেই জ্বলছিল আগুন, লাশ পড়ে ছিল পথে পথে, ৪৫ বছর আগের এই দিনে। ঢাকাকে সেদিন পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী এক বধ্যভূমিতে পরিণত করে তুলেছিল। সেই বর্বরতা প্রতিরোধ করতে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ঘাতকদের বিরুদ্ধে। আজ আমরা সেই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের। তাঁদের আত্মদান, তাঁদের আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাব। এই বলে যাত্রা শুরু হয়েছিল গতকাল শনিবার যখন আকাশ আলো করে সূর্য উঠেছে।

মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের তহবিল সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ৩৬ মাইল পদযাত্রার আয়োজন করেছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও অভিযাত্রী নামের একটি সংগঠন। অভিযাত্রী তিন বছর ধরে স্বাধীনতা দিবসে এই পদযাত্রার আয়োজন করে আসছে। এবার তাদের সঙ্গে তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ‘শোক থেকে শক্তি: অদম্য পদযাত্রা’ স্লোগান নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে হাঁটি এক মাইল’ নামের এই পদযাত্রা শুরু হয়েছিল ভোর ছয়টায়। তবে তার আগে থেকেই শহীদ মিনারে আয়োজক সংগঠনের কর্মীরা পদযাত্রায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক অভিযাত্রীদের সঙ্গে এসে জড়ো হন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে এক হাজার টাকা অনুদান দিয়ে তাঁরা এই এক মাইল প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। অনুদানদাতা পদযাত্রীদের জাদুঘর থেকে দেওয়া হয়েছে সনদপত্র। তবে এক মাইলই হাঁটতে হবে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। যার যেমন সামর্থ্য, সে অনুসারে কেউ এক গন্তব্য থেকে পরবর্তী গন্তব্যে, কেউ আবার একাধিক গন্তব্য, কেউ বা পুরোটা পথই পায়ে-পায়ে এগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত স্থানগুলো অতিক্রম করে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাত্রার শুরুতেই অভিযাত্রীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘রক্তের দাগ মুছে যায়, কিন্তু রক্তের স্মৃতি মোছে না। সেই রক্তদানের গৌরময় উত্তরাধিকার আমরা বহন করছি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা যেমন হানাদারদের রুখে দাঁড়িয়ে পরাজিত করেছিল, তেমনি নতুন প্রজন্মকেও শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। বিশ্বের কাছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নতুন করে তুলে ধরতে হবে।’ অভিযাত্রীর পক্ষে ইনাম আল হক বলেন, ‘জীবনের প্রাত্যহিকতায় আমরা অনেক বিষয় ভুলে যাই। সেই বিস্মৃতি ফিরিয়ে আনতে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।’ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়া উদ্দিন তারিক আলী, দেশের প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, পর্বতারোহী এম এ মুহিত।
সংক্ষিপ্ত আলোচনার পরে সবাই মিলে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। তারপর ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’ গানটি গাইতে গাইতে শুরু হয় পদযাত্রা। প্রথম গন্তব্য জগন্নাথ হল। প্রতিটি গন্তব্যেই ছিল নিবন্ধনের ব্যবস্থা। আর সেই ফাঁকে মুক্তিযুদ্ধে সেই স্থানের জড়িত ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয় অভিযাত্রীদের কাছে। জগন্নাথ হলো থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের রাসেল স্কয়ার, আসাদগেট, মোহাম্মদপুর শরীরচর্চা কলেজ, শ্যামলীর এসওএস শিশুপল্লি, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। সেখান থেকে নৌকায় তুরাগ নদ পাড়ি দিয়ে পায়ে-পায়ে সাদুল্যাপুর শতবর্ষী বটতলা হয়ে আকারাইন বাজার। এখানে ছিল দুপুরের খাবারের বিরতি। বিকেলের ছায়ায় ছায়ায় আবার পদযাত্রা শুরু হয় খাগাইন, আইয়ুকপাড়া, বেলমা, কুটুরিয়া, ঢাকা-আরিচা সড়কের বিশ মাইল হয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে ডুবে যায় বেলা।