মুক্তি মিলল মতিনের, ঘরে গেল বিদ্যুৎ
নিজের ঘরে বিদ্যুৎ নেই, তারপরও বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে মতিন মিয়াকে (৫০)। ঘটনাটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের জোর সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে।
গত মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর মতিন মিয়াকে পাঠানো হয় কারাগারে। এরপর বৃহস্পতিবার আদালত তাঁকে মুক্তি দেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি পল্লী বিদ্যুতের ৪ হাজার ৭ টাকা বকেয়া রেখেছেন।
সমালোচনার মুখে পল্লী বিদ্যুৎ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মতিন মিয়ার ঘরে বিদ্যুতের কোনো সংযোগই নেই। তাঁর বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটর দূরে শফিকুল ইসলাম নামের এক বাড়িতে মতিন মিয়ার নামে একটি মিটার বসানো!
মতিন মিয়ার পুরো নাম আবদুল মতিন মিয়া। পেশায় তিনি দিনমজুর। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতিন মিয়ার বাড়িতে অন্যান্য ঘরে বর্তমানে বিদ্যুৎ থাকলেও অর্থাভাবে মতিন মিয়া বিদ্যুৎ–সংযোগ নিতে পারেননি।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মতিন মিয়া। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর গ্রামের বাড়িতে যান এবং রাত ১১টায় মতিনের ঘরে বিনা মূল্যে একটি নিজস্ব মিটারের সংযোগ দেন।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মতিনের নামে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল তাঁর ভাতিজা পরিশোধ করেছেন। বিল পাওয়ার পর তাঁর মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে। এখনো তদন্ত চলছে। আমি গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় মতিনের বাড়িতে যাই। আমরা তাঁর নিজস্ব স্থাপনায় একটি মিটার লাগিয়ে দিই।’
এ ব্যাপারে আবদুল মতিন মিয়া বলেন, ‘আমার ইজ্জতের যে ক্ষতি হলো, তা কী করে সারাব? ওই মিটার থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করিনি আমি। আমার ঘরে কোনো মিটার ছিল না। তবু জেলে যেতে হলো। যারা এই কারসাজি করেছে, তাদের বিচার চাই।’
উল্লেখ্য, ঘরে কোনো ধরনের বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। তবু বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় আবদুল মতিন মিয়াকে গত মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে মুরাদনগর থানার পুলিশ। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলার চান্দিনায় অবস্থিত কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান। কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার প্রধান বিচারিক হাকিম সোহেল রানার আদালতে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবীরা বিষয়টি নজরে আনেন। পরে প্রধান বিচারিক হাকিম তাঁকে মুক্তি দেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিন পান।