মারজিয়াদের জরুরি প্যাড কর্নার
স্কুলে যাওয়ার পর যদি হঠাৎ মাসিক শুরু হয়! শিক্ষার্থীদের মনে এই ভয় সবচেয়ে বেশি কাজ করে। স্কুলে পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের ভয় দূর করার জন্য দেশের ১১টি জেলার ১১টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জরুরি প্যাড কর্নার চালু করেছেন শাকির মাটি ও মারজিয়া প্রভা নামের দুই তরুণ-তরুণী। তাঁরা পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলায় এ কর্নার চালু করতে চান।
গত বছর থেকে ইমার্জেন্সি বা জরুরি প্যাড কর্নার চালু কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে মাসিক নিয়ে সচেতনতা, স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কাপড় ব্যবহারসহ সার্বিক স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি নিয়ে তাঁদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে। সম্প্রতি প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে মারজিয়া প্রভা জানালেন তাঁদের কাজের আদ্যোপান্ত।
মারজিয়া বাংলাদেশে মাসিক নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুরুতে উদ্যোগের নাম ছিল ‘ডোনেট আ প্যাড ফর হাইজিন বাংলাদেশ’ (স্বাস্থ্যসম্মত বাংলাদেশের জন্য একটি প্যাড দান করুন)। মারজিয়া ও তাঁর দলের সদস্যরা সংগ্রাম করছেন মাসিক বা মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার নিয়ে যে ‘ট্যাবু’ বা গোপনীয়তা আছে, তা ভাঙতে। শুরুতে নিজেদের বেতনের টাকা, পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। বর্তমানে কিছু সংগঠন এবং ব্যক্তি এ কার্যক্রমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে জনগণের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া না গেলে ‘নিজেদের বেতনের টাকা তো আছেই’ বলে হাসলেন মারজিয়া।
মারজিয়া জানালেন, মাসিক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি ও তাঁর দলের সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ অনুমতি নিয়ে কোনো স্কুলে কর্মশালা বা অন্য কোনো কার্যক্রম চালানোর সময় এলাকার লোকজনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এসব কারণে ২০১৭ সালে কার্যক্রম অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে দমে যাননি মারজিয়া ও তাঁর দলের সদস্যরা। সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৭২ জন স্বেচ্ছাসেবক এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন।
জরুরি প্যাড কর্নারের জন্য কাজের ধরন সম্পর্কে মারজিয়া জানালেন, প্রথমে একটি বিদ্যালয়ে প্যাড কর্নারের জন্য ২০০ স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে প্যাড প্রয়োজন হলে পাঁচ টাকা বা যার সামর্থ্য আছে সে বেশি টাকা দিয়ে একটি প্যাড কিনে ব্যবহার করবে। সমবায় পদ্ধতিতে প্যাড বিক্রির টাকা জমা হবে। প্যাডগুলো বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে থাকে সততা স্টোরে। আর পুরো কার্যক্রম তদারকির জন্য একজন নারী শিক্ষককে দায়িত্ব দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। জমানো টাকা থেকে আবার প্যাড কিনে রাখা হয়। ব্যবহারের পর প্যাড নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্যও ব্যবস্থা করে দেয় মারজিয়ার দলের সদস্যরা। কর্নার চালু হয়ে গেলে পরে স্কুলের তত্ত্বাবধানে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ উদ্যোগ দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে।
মারজিয়া জানালেন, শুধু প্যাড কর্নার চালু নয়, বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করেন তাঁরা। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত থাকেন। শিক্ষার্থীরা মাসিক নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বলে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন।
মারজিয়া বললেন, ‘কার্যক্রম শুরুর দিকে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখতাম, মেয়েরা লজ্জায় কথা বলত না, আর এখন মেয়েরা মাইক্রোফোনেও কথা বলে।’