মানসম্পন্ন নির্মাণে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ রোধ করা সম্ভব
‘দুর্যোগ রোধকল্পে মানসম্পন্ন নির্মাণ’ নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, মানসম্পন্ন নির্মাণের মাধ্যমে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ রোধ করা সম্ভব। তবে মানুষের জন্য এই পরিকল্পনা, তাদের কাছে যেতে হবে। তাদের অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
আজ রোববার প্রথম আলো ও ক্রাউন সিমেন্ট আয়োজিত ‘দুর্যোগ রোধকল্পে মানসম্পন্ন নির্মাণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে কীভাবে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়, তা নিয়ে বক্তারা নানা পরামর্শ দেন।
নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক নির্মাণসংক্রান্ত পরিকল্পনার বইগুলো বাংলায় ভাষান্তর করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, দুর্যোগ প্রশমনের সব পরিকল্পনায় মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ, তাঁদের নিজের এলাকার সমস্যা তাঁরাই ভালো বুঝবেন। এ ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহে স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের পক্ষে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে আপত্কালীন সময়ের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণই পারে ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনতে। ভবন নির্মাণের যে আইন রয়েছে, এর যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে জরুরি ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘যেকোনো দুর্যোগে এই বাহিনী সবার আগে যায়। সুতরাং তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে আনা হোক। তাহলে তারা উন্নত প্রশিক্ষণসহ আরও বেশি গতিশীলভাবে কাজ করতে পারবে।’
ক্রাউন সিমেন্টের উপদেষ্টা প্রকৌশলী এ মজিদ চৌধুরী বলেন, দুর্যোগ রোধ করা যায় না। দুর্ভোগ কতটা কম হয়, সেটা করতে হবে। তবে এ জন্য সব ধরনের নির্মাণকে মানসম্পন্ন করতে হবে। রড, সিমেন্টসহ সব নির্মাণসামগ্রীর মানের দিকে খেয়াল দিতে হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক সিকদার বলেন, এখনো বেশির ভাগ ভবন তৈরি হচ্ছে প্রকৌশলীদের কোনো পরামর্শ ছাড়াই। এখানে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে দুর্যোগের ঝুঁকি থেকেই যাবে। প্রয়োজনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে সঙ্গে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ভবন নির্মাণের সব পরিকল্পনাই শহরকেন্দ্রিক। গ্রামে যে ভবনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, এর জন্য কোনো নীতিমালা নেই।’ তিনি বলেন, নগরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।
বাংলাদেশ প্ল্যানেট ইনস্টিটিউটের আকতার মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ নিয়ে অনেক আইন রয়েছে। তবে আইনগুলো মানতে বাধ্য করার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এ জন্য তিনি ইমারত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে কোনো ভবন নির্মাণ শেষ হলে অকুপেন্সি রিপোর্ট বা সমাপ্তি প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করার ওপর জোর দেন তিনি।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন শেলটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক এম সেরাজ, পরিবেশ অধিদপ্তরে ক্লাইমেট চেঞ্জের পরিচালক শওকাত আলী মির্জা, বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটির সাবেক মহাসচিব আলী আকবর মল্লিক, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল ওয়াহেদ, বুয়েটের শিক্ষক রাকিব আহসান, জিপিএইচ ইস্পাত প্ল্যান্টের নির্বাহী পরিচালক মাদানী এম ইমতিয়াজ হোসেন।