মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন
মহামারির মধ্যে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনক
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও দেশে নারী ও শিশুর প্রতি ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে অব্যাহত রয়েছে। জুলাই মাসে ৩৩২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের মাসে ছিল ৩২২টি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং-বিষয়ক জুলাই মাসের প্রতিবেদনে এই তথ্য এসেছে।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আইনজীবী সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ শনিবার প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশে নারী-শিশুর প্রতি ধর্ষণ, হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বিগত মাসগুলোর মতোই অব্যাহত রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জুলাই মাসে ধর্ষণের ৬২টি, গণধর্ষণ ২৫টি, ধর্ষণ ও হত্যার ৪টি ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ৬ জন প্রতিবন্ধীসহ ৪৭ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছে। ধর্ষণের শিকার ৬২ জনের মধ্যে ৩৭ শিশু ও কিশোরী রয়েছে। অন্যদিকে গণধর্ষণের শিকার ১৬ জন এবং ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় দুই শিশু ও কিশোরী রয়েছে। ধর্ষণচেষ্টার শিকার ২৬ জনের মধ্যে ১৭ জনই শিশু ও কিশোরী। যৌন হয়রানি ১৫টি ও শারীরিক নির্যাতনের ৩৯টি ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ২৭ জন শিশু-কিশোরীসহ মোট ৬৬ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।
এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হলেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি কমেনি। বরং ধারাবাহিকভাবে এর অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। জুলাই মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার ও চারজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একজন নারীসহ আটজন সাধারণ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুজন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে জুলাই মাসের চিত্র উদ্বেগজনক উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত আটজন সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন চারজন বাংলাদেশি ও দুজন রোহিঙ্গা। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের পাঁচটি ঘটনার চারটি কক্সবাজারে ও অন্যটি ময়মনসিংহে ঘটে। কারা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে কারা হেফাজতে এক শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুসহ চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কারাভ্যন্তরে একজন কয়েদি নির্যাতিত হন। জুলাই মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুজন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন, তিনটি অস্বাভাবিক মৃত্যুজনিত লাশ উদ্ধার এবং একটি লাশ ফেরত না দেওয়া, বল প্রয়োগ ও বিএসএফ সদস্যের ধর্ষণের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
গণপিটুনি বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে অন্যতম উদ্বেগজনক বিষয় ছিল গণপিটুনিতে মানুষ হতাহতের ঘটনা। মাসটিতে গণপিটুনিতে একজন নিহত ও ১৪ জন আহত হন। চুরি বা ডাকাতি সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাগুলো ঘটে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে স্থানীয় মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে তা যাচাই করা হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।